রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপির রক্তাক্ত ও দগ্ধ লাশ উদ্ধারের ৩৫ ঘণ্টা পর কলাবাগান থানায় মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১২টায় অজ্ঞাত আসামি উলেখ করে মামলাটি করেন ডা. সাবিরার মামাতো ভাই রেজাউল হাসান মজুমদার জুয়েল।
এদিকে খুনের রহস্য এখনো উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। তবে তার পাশের রুমের সাবলেট ভাড়াটিয়া তরুণী কানিজ সুবর্ণাসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। আর মামলার বাদীও সন্দেহ করছেন ওই তরুণীকে।
৩১ মে কলাবাগানের ফার্স্ট লেনের ৫০/১ নম্বর বাড়ির তিনতলার বাসা থেকে সাবিরার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি গ্রিন লাইফ হাসপাতালের কনসালটেন্ট (সনোলজিস্ট) ছিলেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডা. সাবিরা হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজনকে হেফাজতে নিয়েছে ডিবি পুলিশ। এর মধ্যে আছেন সাবলেটে থাকা শিক্ষার্থী, তার এক বন্ধু, গৃহপরিচারিকা ও বাড়ির দারোয়ান। ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও ৬-৭ জনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহেন শাহ মাহমুদ জানান, তারা জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছেন। তবে রহস্য এখনো উদ্ঘাটন করতে পারেননি। তারা অনেকগুলো সূত্র ধরে সামনে এগোচ্ছেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ডা. সাবিরার প্রথম স্বামী ২০০৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এরপর ২০০৫ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করেন সাবিরা। উভয় পক্ষের এক ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে। সাবিরা পরিবারের সঙ্গে স্থায়ীভাবে বাস করতেন রাজধানীর গ্রিন রোডের একটি অ্যাপার্টমেন্টে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এ বছরের জানুয়ারি থেকে কলাবাগান প্রথম লেনের ৫০/১ তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন। ওই বাসায় তিন রুম, এর একটিতে নিজে থাকতেন। অন্য দুটি রুমে সাবলেট হিসাবে দুই তরুণীকে ভাড়া দিয়েছিলেন।
ভাড়া দেওয়া দুই রুমের একটিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করা একজন তরুণী (কানিজ সুবর্ণা) থাকতেন। তিনি মডেলিংয়ের পাশাপাশি দারাজ অনলাইন শপিং সাইটেও কাজ করেন। ওই মডেল ফেব্রুয়ারিতে সাবিরার কাছ থেকে বাসা ভাড়া নেন। সাবলেটে অপর রুমের ভাড়াটে আরেক তরুণী রোজার ঈদে গ্রামের বাড়ি যান। তিনি বাড়ি থেকে আর ফেরেননি।
ঘটনা সম্পর্কে বাদী রেজাউল এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ৩১ মে দুপুর ১২টার দিকে তিনি তার ফুপুর কাছ থেকে মোবাইল ফোনে সাবিরার মৃত্যুর খবরটি শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। গিয়ে দেখেন, তার বোনের লাশ বিছানার উপর উপুড় করে ফেলা আছে। শরীরের বিভিন্ন অংশ পোড়া ও জায়গায় জায়গায় ফোসকা পড়া। তার পিঠের নিচের অংশে পাশাপাশি চারটি ধারালো অস্ত্রের ক্ষত। বাম চোয়ালের নিচে গলার বামদিকে ধারালো অস্ত্রের দুটি গভীর আঘাত, যা জবাই করার মতো। বিছানার বেশ কিছুটা অংশ পোড়া ও মেঝেতে ছাই ছড়িয়ে ছিল।
হত্যার পর ঘটনার আলামত নষ্ট ও ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আগুন লাগানো হয়েছে বলে সন্দেহ তার। ঘটনার সময় শুধু সাবলেটে ভাড়াটে মডেল তরুণী বাসায় অবস্থান করছিলেন বলে অভিযোগ রেজাউলের। তাই সন্দেহভাজন হিসাবে এজাহারে ওই তরুণীর নাম উলেখ করেছেন তিনি।