রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত উপাচার্য চান কুবিয়ান বিদেশি নাগরিকরা

ফয়সাল মিয়া, কুবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংকিং দেশে ও আন্তর্জাতিক ভাবে কতটা এগোবে তা নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের উপর। একজন উপাচার্যকে অধ্যায়ন বিষয়ক দক্ষ হওয়ার পাশাপাশি দক্ষ প্রশাসক হওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। ঢাবি, জাবি ও রাবিসহ দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজনৈতিকভাবে দলীয়করণ মুক্ত রাখবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর এদেশের ছাত্র-জনতার নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে শুরু করেছে এমন নিয়োগের মাধ্যমে। বাংলাদেশে উঠতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গুলোর মধ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) অন্যতম। এখন পর্যন্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছয়জন উপাচার্য পেয়েছে।

বিগত উপাচার্যদের নিয়োগের তথ্য অনুসন্ধান করে দেখা গেছে দলীয় পছন্দ কিংবা আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো তাঁদের। যার ফলে উপাচার্যকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় বিভেদ তৈরি হয়েছে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে।
তবে এবার নতুন বাংলাদেশে কুবির কেমন উপাচার্য হওয়া উচিত তা নিয়ে প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব আলবামার পিএইচডি গবেষক মো: ওবায়দুল হক এর সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের তিনি জানান,
“ভবিষ্যৎ নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমন হওয়া উচিত যিনি শুধু শিক্ষার মানোন্নয়নই করবেন না, বরং নতুন প্রজন্মের জন্য প্রগতিশীল ও উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করবেন। তিনি শিক্ষার মান উন্নত করতে এবং গবেষণার জন্য উৎসাহিত করতে নেতৃত্ব প্রদান করবেন। শিক্ষকদের এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা ও নতুনত্বের পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হবেন। ভবিষ্যৎ বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করতে বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণামূলক কাজের দিকে মনোনিবেশ করবেন।তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার জন্য একটি শক্তিশালী পরিবেশ সৃষ্টি করবেন এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গবেষণা কার্যক্রম চালু করবেন। শিক্ষক নিয়োগে যিনি সর্বোচ্চ মেধার গুরুত্ব দিবেন। কোন নির্দিষ্ট দলীয় কর্মী যেন শিক্ষক নামক মহান পেশায় নিয়োগ না পায় সেটা নিশ্চিত করবেন। ভিসি কোন নির্দিষ্ট দলের হবেন না, ভিসি কোন প্রশাসক হবেন না।পাঠদানের সময় শিক্ষকরা ক্লাসে না যেয়ে উনার দপ্তরে ঘুরবেন না এটা নিশ্চিত করবেন। কোন নির্দিষ্ট ছাত্রসংগঠনের নেতারা উনার দপ্তরে ঘুরাঘুরি করবে না এই পরিবেশ নিশ্চিত করবেন।একজন ভিসি হবেন ছাত্রদের, একজন ভিসি হবেন গবেষকদের এটাই চাওয়া। একজন সাবেক কুবিয়ান হিসেবে খুব বেশি কিছু চাইনি তো!

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) এর সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহাদী হাসান জানান, “লিডারশীপ, অভিজ্ঞতা, পাঠদান ও গবেষণার জ্ঞান, দূরদর্শিতা, সততা, বিচক্ষণতা, ব্যক্তিগত এজেন্ডামুক্ত, আঞ্চলিকতার প্রভাবমুক্ত, গ্রুপিংয়ের মানসিকতা মুক্ত, যোগাযোগ দক্ষতা এবং নেগোসিয়েশন দক্ষতা – মূলত এই এগারোটি যোগ্যতাসম্পন্ন কাউকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের চেয়ারে চাই। শিক্ষক ও অন্যসব নিয়োগসহ প্রতিটি পদক্ষেপের আগে বিষয়টির ফেয়ারনেস যাচাই করতে হবে। উপাচার্যকে বোঝাতে হবে যে তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক নন, বরং একজন সেবক—এটি তার কাজ ও মনোভাবের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে হবে। কম কথা বলার মাধ্যমে তিনি অধিক কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সংকট ও স্বেচ্ছাচারিতা দূর করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে জবাদিহিতা নিশ্চিত করবেন। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও এলামনাইদের সাথে বছরে অন্তত একবার আলোচনায় বসবেন। ফিডব্যাক নিবেন। এইভাবে, তিনি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে একটি সমৃদ্ধ, মানসম্পন্ন ও কার্যকরী ক্যাম্পাস সংস্কৃতি গড়ে তুলবেন।”

হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এর প্রভাষক ও কুবি ৫ম ব্যাচের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম ইমু জানান,”
একাডেমিক যোগ্যতা ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার পাশাপাশি একজন উপাচার্যের মানবিক হওয়া খুবই জরুরী। বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিত করতে যার থাকবে অগ্রণী ভূমিকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারনী এই চেয়ারটিতে আধুনিক বিশ্বের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নিতে আন্তরিকতাপূর্ণ এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন দায়িত্বশীল মানুষের কোন বিকল্প নেই। যার কাছে রাজনৈতিক পরিচয়ের চেয়ে যোগ্যতাই হবে অগ্রাধিকারের মাপকাঠি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা দলীয় কোন্দলের উর্ধ্বে উঠে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নই হবে যার বিবেচ্য বিষয়। যথাযথ আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, আধুনিক পাঠাগার, উন্নত গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে তোলাই হবে একজন উপাচার্যের মূল লক্ষ্য।”

Post Under