এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও নির্বাচনী বিরোধের জেরে প্রকাশ্যে খুন হন সাবেক ইউপি সদস্য আবুবকর সিদ্দিক রকেট ওরফে রকেট মেম্বার। পাঁচ মাস পর চাঞ্চল্যকর রকেট মেম্বার হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে (চার্জশীট) আসামী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হলেন উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আশরাফ উদ্দিন মন্তু।
আদালতে আসামীদের প্রদত্ত ৬৪ ধারার জবানবন্দির ভিত্তিতে উপজেলা যুবলীগ সভাপতিসহ আরো তিনজনকে আসামী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এর আগে এজহারভূক্ত ২২ আসামীর মধ্যে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শের আলমকে করা হয় ১৬ নম্বর আসামী। ৮ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই জিয়াউল হক মোট ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগপত্রে হত্যার পাশাপাশি ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৪/৫ ধারার অপরাধও যুক্ত করা হয়।
আদালতে দাখিলকৃত অভিযোগপত্র ও বাদী সূত্রে জানা যায়, সরাইলের চাঞ্চল্যকর রকেট মেম্বার হত্যা মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন সরাইল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) গৌতম চন্দ্র দে। তিনি হত্যাকাণ্ডের দুই দিনের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহর ও হবিগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করে ছয়জন আসামীকে গ্রেপ্তার করেন। আসামীদের দেয়া তথ্যমতে পরবর্তীতে ফরিদপুর জেলায় অভিযান চালিয়ে আরো ১১ আসামীকে গ্রেপ্তার করেন। আসামী আনার মিয়া, ফরহাদ মিয়া এবং ওসমান গণি স্বেচ্ছায় আদালতে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পুলিশ সুপারের নির্দেশে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত এবং মূল রহস্য উদঘাটনে ২৫ ফেব্রুয়ারি চাঞ্চল্যকর এই মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে দেয়া হয়। এখানে তদন্তের দায়িত্ব পান এস আই জিয়াউল হক।
মামলার এজাহারনামীয় আসামী শাহ আলম মিয়া (৪৫), হৃদয় মিয়া (২০), রিয়াদ মিয়া (২৩) ও রাশেদ মিয়া (২২) হত্যাকাণ্ডে নিজেরা জড়িত থাকা ছাড়াও এর সাথে জড়িত অপরাপর আসামীদের নাম প্রকাশ করে আদালতে ৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন। ঘটনায় উস্কানি ও ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগে এ মামলায় আসামী হন যুবলীগ নেতা আশরাফ উদ্দিন মন্তু। এছাড়া মো. হৃদয় (৩২) ও রিয়াদ আহমেদ রকসি (২৬) নামের দুই যুবককেও অভিযোগপত্রে আসামী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও নির্বাচনী বিরোধের জেরে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যে সাতটার দিকে সরাইল উপজেলা সদরের প্রাত:বাজার সড়কে প্রকাশ্যে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সন্ত্রস্ত অবস্থার সৃষ্টি করে রামদা, চাপাতি, দা কিরিজসহ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত একদল সন্ত্রাসী সরাইল উপজেলা সদরের বেপারিপাড়ার বাসিন্দা ও সরাইল সদর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আবুবকর সিদ্দিক রকেট ওরফে রকেট মেম্বারের উপর হামলা চালায়। তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার পুত্র মো. শাহনেওয়াজ রনি বাদী হয়ে ২২ জনের বিরুদ্ধে সরাইল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।