ব্যাংকের নৈশপ্রহরী খুন : তিনটি ব্যাংক লুটের টার্গেট ছিলো খুনীদের

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
কেবল একটিই নয়, তাদের ছিলো তিন-তিনটে ব্যাংক লুটের টার্গেট। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ডিবিবিএল ব্যাংকের নৈশপ্রহরী খুনের নেপথ্যে থাকা এমনি চাঞ্চল্যকর তথ্য বেড়িয়ে এলো মাত্র চার দিনের মাথায় চাঞ্চল্যকর ঘটনার সাথে জড়িত চারজনকে পুলিশ গ্রেপ্তারসহ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে। বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার বগৈর গ্রামের রসু মিয়ার পুত্র জামাল হোসেন (২৪), আড়াইসিধা গ্রামের মৃত আবদুল খালেকের পুত্র মো. জামিল (২৮) ও রহিম বাদশার পুত্র সাদ্দাম হোসেন (২৭) ও চরচারতলা গ্রামের মৃত মৃত আবুল কাশেমের পুত্র মাসুম কবির (৩৮)। মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে আশুগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে আশুগঞ্জ গোলচত্বর সংলগ্ন বিডিবিএল শাখা ভবনের ভেতর থেকে নৈশপ্রহরী রাজেশ বিশ্বাসের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা ‘বড় কাজ’ করার জন্য ব্যাংক লুটের পরিকল্পনা করছিল। সেজন্য তারা বিডিবিএল, সোনালী ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের আশুগঞ্জ শাখায় খোঁজখবর নিতে থাকে। কিন্তু সোনালী ব্যাংকটি বাজারে হওয়া এবং সবসময় লোকজনের আনাগোনা থাকায় সেখানে লুটের পরিকল্পনা বাদ দেয়া হয়। প্রিমিয়ার ব্যাংকের চারদিকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা থাকায় সেখানেও তাদের লুটের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। বিডিবিএল ব্যাংকের একটি জানালা অরক্ষিত এবং পেছন দিকে চলাচলের ব্যবস্থা থাকায় তারা সেখানে লুটের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী জামাল ও জামিল জানালার গ্রিল কাটে। মোস্তাক ও শাহাদাৎ নামে দু’জন রাস্তায় পাহারা দেয়াসহ লোকজনের গতিবিধি লক্ষ্য করে। জামাল ও জামিল ব্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করে নৈশপ্রহরী রাজেশকে লোহার রেন্স ও শাবল দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যা করে। এরপর তারা ব্যবস্থাপকের কক্ষে গিয়ে সিসিটিভি’র সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে একটি ল্যাপটপ ও নগদ পাঁচ হাজার টাকা হাতায়। পরবর্তীতে টাকার ভল্ট ভেঙে রক্ষিত টাকা লুটের চেষ্টা করলেও ভল্ট ভাঙতে না পারায় তারা হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে পারেনি।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, ক্রাইম সিন পর্যালোচনা করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত চারজনকে শনাক্ত করা হয়। পরে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত ল্যাপটপ ও টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ব্যাংকের ভল্টের খোয়া যাওয়া দু’টি চাবি উদ্ধার এবং অভিযুক্ত বাকি দু’জনকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।হত্যকাণ্ডের মূলহোতা জামাল হোসেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় অপরাধ স্বীকার করে দিয়েছেন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী।

উল্লেখ্য গত ২৭ সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে আশুগঞ্জে ব্যাংকটির শাখা থেকে নৈশপ্রহরী রাজের বিশ্বাসের (২৩) হাত-পা ও মুখ বাঁধা রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রাজেস সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার চান্দপুর গ্রামের ক্ষিরোদ বিশ্বাসের পুত্র।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. রইছ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোজাম্মেল হোসেন রেজা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর দফতর) আবু সাঈদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) মকবুল হোসেন, জ্যেষ্ঠ সহকারি পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আলাউদ্দিন চৌধুরী, সহকারি পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) আনিসুর রহমান, ডিআইও-১ ইমতিয়াজ আহাম্মদ, আশুগঞ্জ থানার পরিদর্শক (ওসি) জাবেদ মাহমুদসহ জেলার অন্যান্য থানার ওসিগণ উপস্থিত ছিলেন।

Post Under