এমদাদুল হক সোহাগ:
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগের কার্যালয়ের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার দুপুরে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে সংযুক্ত হয়ে তিনি অত্যাধুনিক পার্টি অফিসটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এসময় তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে বাংলার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়। দেশের উন্নয়ন হয়। ৭৫ এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা মানুষের জন্য কিছু করেনি, দেশের জন্য কিছু করেনি। তারা নিজেদের আখের গুছিয়েছে। আওয়ামীলীগ গণমানুষের সংগঠন। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। আমি চাই কুমিল্লার মতো সারা দেশের জেলা গুলোতে আওয়ামীলগের একটি করে কার্যালয় হউক।
সম্প্রতি কুমিল্লার সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটনার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুমিল্লার ঘটনা সত্যিই অত্যন্ত দু:খজনক। মানব ধর্মকে সম্মান করা ইসলামের শিক্ষা। নিজের ধর্ম পালনের যেমন সকলের অধিকার আছে তেমনি অন্যের ধর্মকে হেয় করা এটা ইসলাম শিক্ষা দেয়না। আর নিজের ধর্মকে সম্মান করার সাথে সাথে অন্যের ধর্মকেও সম্মান করতে হয়। তিনি বলেন, আইন কেউ হাতে তুলে নিবেননা। কেউ যদি অপরাধ করে সে যেই হোক তাঁর বিচার হবে। ধর্ম নিয়ে কেউ বারাবারি করবেনা এটা নবীর শিক্ষা। প্রত্যেকটা ধর্মই শান্তির কথা বলে। তিনি বলেন বাংলাদেশে আমরা অসম্প্রদায়িক সমাজে বসবাস করি। সকলকে ধর্মের সম্প্রীতি নিয়ে চলতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা আত্মত্যাগ করেছেন, রক্ত দিয়েছেন সেখানে কেউ ধর্মকে প্রাধান্য দেয়নি। সকল ধর্মের মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়েই এই দেশ স্বাধীন হয়েছে।
কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আরো দুটি বিভাগ দিবো। একটি পদ্মা, আরেকটি মেঘনা। একসময় জাতীয় স্লোগান ছিলো পদ্মা মেঘনা যমুনা তোমার আমার ঠিকানা, ঢাকা না পিন্ডি ঢাকা ঢাকা। সেই জাতীয় স্লোগান থেকেই মেঘনার নামে কুমিল্লা বিভাগ দেওয়া হবে। কু নাম দিয়ে আমি বিভাগ দিবোনা। খুনী মোস্তাকের কুমিল্লার নামে বিভাগ দিতে চাইনা। তাছাড়া, কুমিল্লা নামে বিভাগের নাম করণ করলে ফেনী, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসতে চায়না।
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাতের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠ শেষে স্বাগত বক্তব্য দেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলগের সভাপতি ও কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর, সেনানিবাস ও সিটি কর্পোরেশন) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।
তিনি বলেন, আজ কুমিল্লার আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাসের দিন। আমরা দীর্ঘদিন অপেক্ষায় ছিলাম কবে আমাদের প্রাণের ঠিকানা কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগের কার্যালয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। আজ সেই আননন্দের দিন। আমাদের এই ঠিাকানা হৃদয়ের ঠিকানা, জাতির জনকের ঠিকানা। এই পার্টি অফিস করতে গিয়ে আমরা কারো কাছ থেকে চাঁদা গ্রহণ করেনি। আমি এবং আমার দলীয় নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় এই পার্টি অফিস নির্মাণ করেছি। কার্যালয়টি উদ্বোধন পর থেকে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, কৃষকলীগ ও ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হবে। তিনি বলেন, চক্রান্তকারীরা চেয়েছিল কুমিল্লা সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য। আমি পবিত্র হজ্বে গিয়ে ছিলাম। আমি থাকলে এ কাজটি তারা করতে পারতোনা। তারপরেও আমি মক্কা নগরী থেকে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছি। আমার দলীয় নেতাকর্মী, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করেছি। মাত্র চার ঘন্টার মধ্যে সব কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। আমি দ্রুত দেশে ফিরে গত ১৮ অক্টোবর কুমিল্লার টাউনহলে সম্প্রীতি সমাবেশ করেছি। লাখো জনতা আমার সাথে একাত্মতা পোষণ করেছে। আমি আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) আশ্বস্থ করতে চাই এই কুমিল্লার সম্প্রীতি নষ্ট করার সাহস কারোর নাই। অর্থের লোভে একসময় কুমিল্লা বিএনপির ঘাটি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আজকের কুমিল্লা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ঘাটিতে পরিণত হয়েছে। আজকের কুমিল্লা জাতির জনকের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কুমিল্লা। আজকের কুমিল্লা জাতির জনকের স্বপ্নের কুমিল্লা। কুমিল্লা মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের সম্মেলন করে কমিটি গঠন করেছি। আমাদের শরীরে এক বিন্দু পরিমান রক্ত থাকতে এই শহর আপনারই থাকবে ইনশাল্লাহ।
কুমিল্লা বিভাগের বিষয়ে আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, একশ বছর আগে আমরা রাজধানীর মানুষ ছিলাম। ১৯৮৬ সাল থেকে আমি কুমিল্লা বিভাগের জন্য আন্দোলন করেছি। কিন্তু বিভাগ হয়েছে অন্য জায়গায়। তাই আমি আবারো কুমিল্লা নামে কুমিল্লা বিভাগ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। কোন কুলাঙ্গারের নামে কোন এলাকার পরিচিত হয়না বলেও জানান এমপি বাহার। তিনি বলেন, কুমিল্লা নামে কুমিল্লা বিভাগ হউক সেটা কুমিল্লার আপামর মানুষের দাবি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলাম এমপি, কুমিল্লা-৫ আসনের এডভোকেট আবুল হাসেম খান এমপি, কুমিল্লা-৭ আসনের অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত, কুমিল্লা-৩ আসনের ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুণ এমপি, কুমিল্লা-৮ আসনের নাছিমুল আলম চৌধুরী নজরুল, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি আরমা দত্ত, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন , কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী, কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানগণ সহ নেতাকর্মী ও অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।