করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় জনসমাগম এড়াতে মেলার আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
বুধবার এনবিআরের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে এনবিআরের সদস্য (কর প্রশাসন) আরিফা শাহানা এ কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ এর কারণে এবার কর মেলার আয়োজন করা হচ্ছে না। তবে মাঠপর্যায়ের কর অফিসগুলোতে করদাতারা যাতে মেলার মতো সুবিধা পান, সেই ব্যবস্থা করা হবে।”
২০১০ সাল থেকে কর মেলা আয়োজন করে আসছে এনবিআর। ওই বছর রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রথম কর মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর প্রতি বছরই মেলার পরিসর বেড়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাশপাশি সব বিভাগীয় শহর এবং জেলা-উপজেলাতেও কর মেলার আয়োজন করে আসছে এনবিআর।
১৪ নভেম্বর থেকে ২০ নভেম্বর রাজধানীসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরে সপ্তাহব্যাপী এই মেলা হয়। রাজধানীতে মেলা হয় বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাব প্রাঙ্গণে।
এছাড়া সব জেলা শহরে চার দিন এবং ৪৮টি উপজেলায় দুই দিন মেলা হয়। উপজেলা পর্যায়ে যেসব স্থানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ভালো এমন গ্রোথ সেন্টারে এক দিন মেলা হয়।
গতবার কর মেলায় ৬ লাখ ৫৫ হাজার করদাতা রিটার্ন জমা দিয়েছিলন।
কর মেলার জন্য সাধারণ করদাতারা অপেক্ষা করে থাকেন। কর মেলায় গিয়ে ঝক্কিঝামেলা ছাড়াই অনেকটা নির্বিঘ্নে বার্ষিক আয়কর জমার পাশাপাশি কর পরিশোধ করতে পারেন। গত ১০ বছরে কর মেলা করদাতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে গেছে।
কর মেলায় করদাতারা কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) গ্রহণ, রিটার্ন ফরম পূরণ থেকে শুরু করে কর পরিশোধের জন্য ব্যাংক বুথসহ নানা ধরনের সেবা পান।
একই ছাদের নিচে সব সেবা পাওয়ায় গত দশ বছরে করদাতাদের কাছে কর মেলা জনপ্রিয় হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন কর মেলায় করদাতাদের ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। কর কার্যালয়ে গিয়ে হয়রানি এড়াতে অনেক করদাতা কর মেলার জন্য অপেক্ষা করেন। এবার তাদের সেই আশায় গুঁড়েবালি।
আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দেওয়া যাবে।
এনবিআরের কর কর্মকর্তারা জানান, দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র বাংলাদেশেই কর মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এক দশক আগে কর মেলা শুরু হওয়ার পর থেকেই করদাতাদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে। রাজধানীর কর মেলার সাত দিনে সকাল থেকেই ব্যাপক ভিড় দেখা যায়।
প্রতি বছর যত করদাতা রিটার্ন দাখিল করেন, তাদের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ কর মেলায় জমা পড়ে। করদাতারা মেলায় কর দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
গত বছর কর মেলায় ৬ লাখ ৫৫ হাজার ৯৫ জন করদাতা রিটার্ন জমা দিয়েছিলেন। কর আদায় হয়েছিল ২ হাজার ৬১৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
গতবার সবমিলিয়ে ২২ লাখের মতো করদাতা তাদের বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দিয়েছিলেন।
সে হিসাবে দেখা যায়, গতবার যত করদাতা রিটার্ন দাখিল করেছিলেন তাদের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ কর মেলায় জমা দিয়েছিলেন।
এবার করোনার কারণে পরিস্থিতি বদলে গেছে। অনেকের আয় কমেছে। কর মেলা না হলে রিটার্ন দেওয়াও কমতে পারে বলে মনে করেন অনেক কর কর্মকর্তা।
প্রতি বছর সেরা করদাতাদের ঘটা করে সম্মাননা দেয় এনবিআর। তাও এবার অনিশ্চিত হয়ে গেছে। করোনাভাইরাসের কারণে এবার সেরা করদাতাদের সম্মাননা নাও দেওয়া হতে পারে।