কুমিল্লায় গোমতী চরের মাটি লুট উদাসীন প্রশাসন

কুমিল্লায় গোমতী নদীর চর থেকে দেদারে চলছে মাটি লুট। শুষ্ক মৌসুমে প্রতি বছরই চলে নদীর বালু এবং মাটি লুটের উৎসব। এবার মাটি লুট সিন্ডিকেটের পরিধি আরও বেড়েছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সিন্ডিকেটগুলো এখন আগের থেকে বেশি বেপরোয়া। ভেকু আর ড্রেজার দিয়ে চরের উর্বর মাটি কেটে লুট করছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। এতে চরে প্রতিদিনই কমছে কৃষিজমির পরিমাণ। কমছে সবজির চাষ। অথচ কয়েক বছর আগেও গোমতীর চরজুড়ে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, আলু, শিমসহ নানা ধরনের শাকসবজি চাষ হতো। কিন্তু এখন পুরো চর ক্ষতবিক্ষত। চরের সোনালি ফসল এখন শুধুই স্মৃতি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আশঙ্কা এ বছর যেভাবে গোমতীর চরের মাটি কাটা হচ্ছে, তাতে চর থেকে অন্তত ৭০০ একর ফসলি জমি হারিয়ে যাবে। প্রশ্ন উঠেছে-চরের মাটি লুটের বিরুদ্ধে প্রশাসন উদাসীন কেন? তাদের দফায় দফায় লোক দেখানো অভিযানে মাটি লুট বন্ধ হচ্ছে না কেন? তাহলে কি লুটেরাদের সঙ্গে প্রশাসনের যোগসাজশ রয়েছে? নাকি রাজনৈতিক প্রভাবে কারণে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না? জনমনে এমন নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

জানা যায়, নাব্য সংকটে নদীটি এখন সরু খালে পরিণত হয়েছে। আর এ সুযোগে নদীর চর থেকে কোটি কোটি টাকার মাটি লুট করে ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। জেলার আদর্শ সদর উপজেলা থেকে শুরু করে দাউদকান্দি পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চলছে মাটি লুট। এক যুগের বেশি সময় তা অব্যাহত রয়েছে। বছরে ৬ মাস মাটি লুট করে এখন আঙুল ফুলে কলাগাছ শত শত মাটি ব্যবসায়ী।

উপজেলার সংরাইশ, টিক্কারচর, অরণ্যপুর, ঝাঁকুনিপাড়া, শালধর পাঁচথুবী, জালুয়াপাড়া, বানাশুয়া, গোলাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোর থেকে শুরু হয় চরের মাটি কাটা। থামে গভীর রাতে। ট্রাক্টরে করে এ মাটির বেশির ভাগ যায় বিভিন্ন ইটভাটায়। ট্রাক্টরের চাকায় নদীপাড়ের পাকা সড়কগুলো এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়া অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনসহ বিভিন্ন স্থানে স্থাপনার নামে নদী দখল হচ্ছে। অবৈধ মাটি কাটা বন্ধ করে গোমতী নদী এবং পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসন কার্যকরী পদক্ষেপ নেবে-এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের। কালা জবেদ নামে এক ট্রাক্টরচালক জানান, গোমতী নদীর মাটির ৯০ শতাংশই যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। আর বাকি মাটি মানুষ বিভিন্ন ভরাটের কাজে নিচ্ছে। প্রতি ট্রাক্টর মাটির দাম এক হাজার ২০০ টাকা, আর প্রতি ডাম্প ট্রাক মাটির দাম দুুই হাজার ২০০ টাকা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, গোমতী নদীর মাটি লুট নিয়ে কথা বলতে বলতে পেরেশান হয়ে গেছি। প্রশাসন যদি আন্তরিক হয়, তবেই মাটি লুট বন্ধ হবে। এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রায়ই অভিযান হচ্ছে কিন্তু মাটি লুট বন্ধ হচ্ছে না। এছাড়া নেপথ্যে থাকা প্রভাবশালীরা আইনের আওতায় আসছেন না।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, গোমতী চরের মাটি কাটার বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রেখেছি। তারপরও শুনছি, রাতের অন্ধকারে মাটি কাটা হচ্ছে। আমরা এখন দিনের পাশাপাশি রাতেও অভিযান পরিচালনা করব।

Post Under