কুমিল্লায় নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতকরণে তৎপর জেলা কর্মসংস্থান অফিস

২০টি ইউনিয়নে কর্মশালা সম্পন্ন

নিরাপদ, সুশৃঙ্খল এবং নিয়মিত অভিবাসন নিশ্চিত করার লক্ষে নিরাপদ অভিবাসনে তথ্য সহায়তা” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, কুমিল্লা এবং অভিবাসী তথ্য কেন্দ্র বাংলাদেশ (এমআরসি) গত ০৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ নভেম্বর ২০২০ তারিখ পর্যন্ত কুমিল্লা জেলার ২০টি ইউনিয়নে কর্মশালার আয়োজন করেছে। ইউনিয়নগুলো হলো : দেবিদ্বার উপজেলার ফাতেহাবাদ ও মনোহরপুর ইউনিয়ন, বরুড়া উপজেলার শাকপুর ইউনিয়ন, ব্রাক্ষ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ও মালাপাড়া ইউনিয়ন, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ও শ্রীপুর ইউনিয়ন, মুরাদনগর উপজেলার ছালিয়াকান্দি, বাবুটিপাড়া ও পাহাড়পুর ইউনিয়ন, দাউদকান্দি উপজেলার বারপাড়া ও সুন্দলপুর ইউনিয়ন,  চান্দিনা উপজেলার গোল্লাই ও কেরণখাল ইউনিয়ন, হোমনা উপজেলার চান্দেরচর ও জয়পুর ইউনিয়ন, লাকসামের কান্দিরপাড় ও গোবিন্দপুর এবং মেঘনা উপজেলার মানিকারচর ও লুটেরচর ইউনিয়ন।

আজ ১৯ নভেম্বর ২০২০ কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলার লুটেরচর ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে কুমিল্লা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস এবং অভিবাসী তথ্য কেন্দ্র বাংলাদেশ (এমআরসি) এর আয়োজনে নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ক সচেতনতামূলক একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। বৈদেশিক কর্মসংস্থানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির লক্ষে আয়োজিত এ কর্মশালায় মেঘনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, লুটেরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্যগণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ, সাংবাদিকবৃন্দ, মাদ্রাসার শিক্ষক, ইমাম ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ ৩০ জন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে অভিবাসী তথ্য কেন্দ্র বাংলাদেশ (এমআরসি) এ আয়োজনে সার্বিক সহায়তা প্রদান করে।

 

জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, কুমিল্লা-এর সহকারী পরিচালক দেবব্রত ঘোষ তাঁর উপস্থাপনায় নিরাপদ, নিয়মিত, সুশৃঙ্খল এবং দায়িত্বশীল অভিবাসন নিশ্চিতকরণ, মানব পাচার রোধ, বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রক্রিয়ায় মধ্যসত্বভোগীদের দৌরাত্ব নিরসন, উচ্চ অভিবাসন ব্যয় হ্রাস, অভিবাসী কর্মীর অধিকার সুরক্ষা, অভিবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা এবং কল্যাণ নিশ্চিতকরণে বর্তমান সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা ব্যক্ত করেন। তিনি বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষতা ও সচেতনতার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন।

 

তিনি বলেন, জেনে বুঝে, প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ হয়ে বিদেশ গেলে, অর্থ-সম্মান দুটোই পাওয়া যাবে। মিথ্যা তথ্যের উপর নির্ভর করে বা অন্যের প্রলোভনে বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত না নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়াও তিনি নিরাপদ অভিবাসনের বিভিন্ন আইন, বিধি ও নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করেন এবং করোনাকালীন দূর্যোগ মোকাবিলায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রাণালয়ের বিভিন্ন কল্যাণমূলক উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। এছাড়াও নারী অভিবাসনের ঝুঁকি, সম্ভাবনা এবং সুবিধাসমূহ উল্লেখ করেন। কর্মশালায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, বোয়েসেল, বিদেশস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে অবস্থিত শ্রম কল্যাণ উয়িং এবং বায়রা’র কার্যক্রম নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়।

 

মেঘনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব মোঃ সাইফুল্লাহ মিয়া রতন বলেন, এ ধরণের তথ্য প্রচার জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান এবং এ ধরনের কর্মশালা মেঘনা উপজেলার সব ইউনিয়নে আয়োজনের আহবান জানান। নিরাপদ অভিবাসন বিষয়েও ইউনিয়ন পরিষদ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

কর্মশালায় এমআরসি বাংলাদেশের কাউন্সেলর জনাব গোলাম মোস্তফা মানব পাচার রোধে ইউনিয়ন পরিষদের করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়াও তিনি অভিবাসনের নানা দিক এবং অভিবাসী তথ্য কেন্দ্র বাংলাদেশের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি তুলে ধরেন। তিনি এমআরসি বাংলাদেশের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কাজ সকলের সামনে তুলে ধরেন। তিনি আরও  নিরাপদ অভিবাসনে ইউনিয়ন পরিষদের ভূমিকা ও করনীয় নিয়েও আলোচনা করেন। এছাড়াও নিরাপদ অভিবাসনে এমআরসি বাংলাদেশ কুমিল্লা ও ঢাকা জেলায় কার্যক্রম তুলে ধরেন এমআরসি কাউন্সেলর জনাব রিফাত শাহারিয়ার। এছাড়া জনশক্তি জরিপ অফিসার জনাব তাজুল ইসলাম অভিবাসনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন।

 

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে কুমিল্লা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারি পরিচালক দেবব্রত ঘোষ অংশগ্রহণকারী সদস্যদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং জনসাধারণের ভোগান্তি, প্রতারণা রোধে কার্যকর ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানান। লিফলেট, বুকলেট ছাড়াও অনুষ্ঠান শেষে উপহারস্বরুপ সবার মাঝে আইসিএমডি কর্তৃক প্রদত্ত ব্যাগ প্রদান করা হয়।

 

এছাড়া তিনি বিস্তারিত তথ্যের জন্য www.probashi.gov.bd, www.bmet.gov.bd, www.wewb.gov.bd, www.bmet.comilla.gov.bd সাইটগুলো ভিজিট করার পরামর্শ দেন তিনি। কর্মশালায় আরো জানানো হয় যে, অভিবাসন বিষয়ে যেকোন তথ্য ও পরামর্শের জন্য এমআরসি বাংলাদেশের হেল্পলাইন নম্বর: ০১৭১৩০৮৬৩৩০ (কুমিল্লা) এবং ০১৭৩০৬৬৬৯৩৬ (ঢাকা) নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয়। এছাড়াও অভিবাসন বিষয়ে যেকোন তথ্য ও পরামর্শের জন্য এমআরসি বাংলাদেশের ফেসবুক পেইজ (facebook.com/bangladeshmrc) থেকেও অভিবাসন বিষয়ে যেকোন তথ্য পাওয়া যাবে বলে কর্মশালায় জানানো হয়।

Post Under