নিজস্ব প্রতিবেদক:
আরাফাত ভূইয়া ই-পাসপোর্ট করার জন্য এসেছিলেন কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। নতুন নিয়ম অনুযায়ি অনলাইনে সকল তথ্য পূরণ করে সেটার প্রিন্ট কপি ও ব্যাংক জমার রশিদ নিয়ে কাগজপত্র জমা দিতে গেলেই কর্তা বাবুরা বলে দিলেন ফরম পূরনে প্রচুর ভুল। সংশোধন করে নিয়ে আসেন। বাধ্য হয়ে আবার গেলেন কম্পিউটার দোকানে, সেখান থেকে জানানো হলো সব ঠিক আছে। আপনি আবার যান। আবারো দীর্ঘক্ষণ লাইনে দারিয়ে পাসপোর্টের ফরম জমা দিতে গেলে পাসপোর্ট অফিসের লোকজন নতুন করে তাঁর ফরমে আবিষ্কার করেছেন ভুল! বললেন হবেনা। ঠিক করে আনুন। পাশে দাড়ানো আরেকজন বললেন, ভাই আপনার পাসপোর্ট এই জীবনে আর পাবেন না। আপনি দালালের সীল ও সিস্টেম ছাড়া চলে এসেছেন। আপনাকে অনেক কষ্ট দিবে । আপনি দালালের মাধ্যমে আসুন। আমরাও উপায় না পেয়ে দালালের মাধ্যমে সীল নিয়ে এসিছি। বাধ্য হয়ে আরাফাত দালালালের মাধ্যমে নির্দিষ্ট টাকার আড়াই হাজার টাকা বেশি দিয়ে সিস্টেমে এসছেন পাসপোর্ট অফিসে। এবার আবেদন পত্র হাতে পেয়ে আর কিছু বলেননি পাসপোর্ট অফিসে বাবু সেজে থাকা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা।
যারা সরকারের নির্ধারিত ফিতে পাসপোর্ট করার জন্য আশা করে কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্টে আসেন তাদের এভাবেই পদে পদে হয়রানি করা হয়। তবে যদি, প্রভাবশালী কেউ থাকেন তাহলে আর কষ্ট পেতে হয়না। পাসপোর্ট পাওয়া যায় সহজেই। কুমিল্লা পাসপোর্ট অফিসে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের হাতে থাকা আবেদন পত্রে রয়েছে গোপন কোড ও সীল। একক দালালের একেক রকম সীল ও কোড।
কুমিল্লা শহরতলীর নোয়াপাড়া এলাকার বিভিন্ন বিভিন্ন গলির বাসার ভেতর ও চিপাতে বসে পাসপোর্টের কাজ করেন দালালেরা। গলির ও বাসার সামনে বসানো থাকে পাহারাদার। আগে থেকে সিস্টেমে যোগাযোগ করে আসেন পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা। পাসপোর্টের সাথে জড়িত নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, বাড়তি যে টাকাটা নেয়া হয় সেটার এক হাজার পাসপোর্ট অফিসে, আরেক হাজার ভেরিফিকেশনের জন্য পুলিশের আার তিন থেকে পাছশ টাকা পায় দালালে। দালালের এই টাকার মধ্যে ফরম পূরণ, ফটোকপি, ই-পাসপোর্টের জিমেইল আইডি খোলা, ব্যাংক ড্রাফট ঝামেলাও আছে। তাছাড়া, নির্দিষ্ট সময়ে পাসপোর্ট ডেলিভারি দিতে পাসপোর্টের সংখ্যা অনুযায়ি টাকা দুই জায়গায় পাঠাতে হয়। সবকাজ দালালকেই করতে হয়। কম্পিটারে সব ডকুমেন্ট তৈরি ও পরিশ্রম অনুযায়ি যে টাকা পাওয়া যায় তা আসলেই কম। অথচ প্রশাসন সব সময় আমাদের উপর অভিযান চালিয়ে জেল জরিমানা করে। পাসপোর্ট অফিস ও পুলিশ যদি টাকা না নেয় তাহলে আমরা এত টাকা নিতাম না। প্রশাসনের সবাই সব কিছু জেনেও আমারা নিরিহ দালালের উপর সব দোষ ও অভিযান অব্যাহত রাখে।
এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্টে অফিসের উপ-পরিচালক মো.নুরুল হুদা বলেন, প্রিন্টিং সমস্যার কারণে অনেক সময় পাসপোর্ট আসতে দেরি হয়। এছাড়া আবেদনে তথ্যগুলো ভুল, পুলিশ প্রতিবেদন দেরিতে আসাসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণেও মানুষ সঠিক সময়ে পাসপোর্ট পায় না।
কিন্তু বাইরে থেকে দালালের সিল না থাকলে পাসপোর্ট হয় না, পাসপোর্ট অফিসে দালালের দৌরাত্বের অনেক অভিযোগ রয়েছে। এমন প্রশ্নের ক্যামেরার সামনে তিনি কথা বলতে রাজি হন নি। তবে তিনি বলেন, দালাল নেই এমন না। তবে দালাল আগের চেয়ে কমেছে।