গ্রেটার কুমিল্লা:
গ্রাম অঞ্চলে নিরাপদ, নিয়মিত, সুশৃঙ্খল এবং দায়িত্বশীল অভিবাসন নিশ্চিতকরণ, মানব পাচার রোধ, বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রক্রিয়ায় মধ্যসত্বভোগীদের দৌরাত্ব নিরসন, উচ্চ অভিবাসন ব্যয় হ্রাস, অভিবাসী কর্মীর অধিকার সুরক্ষা, অভিবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা এবং কল্যাণ নিশ্চিতকরণে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, কুমিল্লা এবং অভিবাসী তথ্য কেন্দ্র বাংলাদেশ (এমআরসি) অভিবাসন বিষয়ক সচেতনতামূলক একটি কর্মশালার আয়োজন করেছে । ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে সচেতনামূলক এই কর্মশালার লক্ষ্য হলো স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের অভিবাসন বিষয়ে মৌলিক তথ্য প্রদান, অভিবাসন আইন, অভিবাসন বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব-কর্তব্য, বিশেষ করে শ্রম অভিবাসন, নৈতিক এবং নিরাপদ নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের জ্ঞান ও বোঝার উপলব্ধি প্রসারিত করা।
আজ বুধবার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়ন পরিষদে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি (ইউনিয়ন পরিষদ) ও স্থানীয় গণ্যমান্য ৩০ জন ব্যক্তিদের নিয়ে এই কর্মশালা শুরু হয়েছে। ০৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১১ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত কুমিল্লা জেলার ১০টি উপজেলার ২০টি ইউনিয়নে ১(এক) দিন করে এই সচেতনতামূলক কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হবে।
এই প্রোগ্রামরে লক্ষ্য হলো সরকারী কর্মসূচীতে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা, বিশেষ করে নিরাপদ অভিবাসনে বিশ্বস্থ এজেন্সীর মাধ্যমে এলাকার মানুষের সচেতনতা বাড়াতে ইউনিয়ন পরিষদের ভুমিকা ও করণীয় চিহ্নিত করা।
১০ নং বাতিসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম জাহিদ হাসান টিপু তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে অংশগ্রহনকারীদের উৎসাহিত করার জন্য এই ধরণের অনুষ্ঠানের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, ইউনিয়ন পরিষদ সরকারের যে কোন ধরণের তথ্য প্রচার ও প্রসারে সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিরাপদ অভিবাসন বিষয়েও ইউনিয়ন পরিষদ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরও যোগ করেন যে, এই ইউনিয়ন থেকে প্রচুর লোক বিদেশে যায়, আমরা তাদের কাছে অভিবাসনের এসব তথ্য তুলে ধরবো। ইউনিয়ন পরিষদ প্রতিনিধিগণ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সুতরাং, তারা নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও বৈধ অভিবাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।
জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, কুমিল্লা-এর উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সফিকুর রহমান তাঁর উপস্থাপনায় বলেন যে, নিরাপদ, নিয়মিত, সুশৃঙ্খল এবং দায়িত্বশীল অভিবাসন নিশ্চিতকরণ, মানব পাচার রোধ, বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রক্রিয়ায় মধ্যসত্বভোগীদের দৌরাত্ব নিরসন, উচ্চ অভিবাসন ব্যয় হ্রাস, অভিবাসী কর্মীর অধিকার সুরক্ষা, অভিবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা এবং কল্যাণ নিশ্চিতকরণে বর্তমান সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা ব্যক্ত করেন। তিনি বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষতা ও সচেতনতার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, জেনে বুঝে, প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ হয়ে বিদেশ গেলে, অর্থ-সম্মান দুটোই পাওয়া যাবে। মিথ্যা তথ্যের উপর নির্ভর করে বা অন্যের প্রলোভনে বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত না নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়াও তিনি নিরাপদ অভিবাসনের বিভিন্ন আইন, বিধি ও নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করেন এবং করোনাকালীন দূর্যোগ মোকাবিলায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রাণালয়ের বিভিন্ন কল্যাণমূলক উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।
এছাড়াও এমআরসি বাংলাদেশের কাউন্সেলর মো: গোলাম মোস্তফা মানব পাচার প্রতিরোধে ইউনিয়ন পরিষদের ভুমিকা, করণীয়, নিরাপদ অভিবাসনে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার কিভাবে সহায়তা করতে পারে এবং জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে নিরাপদ অভিবাসন গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি আরও বলেন যেকোন ব্যক্তি ঘরে বসেই নিরাপদ অভিবাসনের তথ্য পেতে পারে, বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা যাচাই করতে পারেন, অভিযোগ, সম্যসা সম্পর্কে সরকার জানাতে পারেন। এজন্য তিনি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণব্যুরো (বিএমইটি) ওয়েবসাইট ভিজিট করে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের জন্য সকলকে অনুরোধ করেন।
এছাড়াও কর্মশালায় এমআরসি বাংলাদেশের কাউন্সেলর রিফাত শাহরিয়ার, অভিবাসনের নানা দিক সহ, অভিবাসী তথ্য কেন্দ্র বাংলাদেশের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কার্যাবলিসমূহ এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋন গ্রহনের প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা করেন। ভবিষ্যতে এই ধরনের কর্মশালা বাড়ানোর জন্য সকলেই তাগিদ দেন।
কর্মশালায় আরো জানানো হয় যে, অভিবাসন বিষয়ে যেকোন তথ্য ও পরামর্শের জন্য এমআরসি বাংলাদেশের হেল্পলাইন নম্বর : ০১৭১৩০৮৬৩৩০ (কুমিল্লা) এবং ০১৭৩০৬৬৬৯৩৬ (ঢাকা) নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয়। এছাড়াও অভিবাসন বিষয়ে যেকোন তথ্য ও পরামর্শের জন্য এমআরসি বাংলাদেশের ফেসবুক পেইজ থেকেও অভিবাসন বিষরয় যেকোন তথ্য পাওয়া যাবে বলে কর্মশালায় জানানো হয়।