কুমিল্লা মহানগরীর ছোটরা এলাকার আবদুল লতিফ মিয়ার ছেলে আনোয়ার হোসেন। ছোটরা কিংবা আশেপাশের এলাকায় কেউ মারা গেলে তার ডাক পড়ে কবর খোঁড়ার জন্য। আবার কখনো ডাকতে হয় না। নিজেই এগিয়ে যান। কবর খুঁড়ে দেন। কৈশোর বয়স থেকে কবর খুড়ছেন। এখন পর্যন্ত দু’শতাধিক কবর খুড়েছেন। এত মানুষের কবর খোঁড়া লোকটার কোন ঘর নেই। তিরপল দিয়ে ঘেরা একটি ছাপড়া ঘরে থাকেন। রোদ বৃষ্টি ঝড়ে কষ্ট পান। তবুও কেউ এগিয়ে আসেনা। একটা ঘর বানিয়ে দেয় না।
ঘরহীন আনোয়ার হোসেনের খরবটা পৌছে গেলো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগ্রত মানবিকতার কাছে। জাগ্রত মানবিকতার উপদেষ্টা ও কুমিল্লা জেলা ক্রিকেট কমিটির সভাপতি সাইফুল আলম রনি নিজ উদ্যেগে আনোয়ার হোসেনের জন্য নতুন ঘর নির্মাণ করে দেন। গত ১৪ জানুয়ারী বিকেলে নতুন ঘর পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেন আনোয়ার হোসেন। হাত তুলে দোয়া করেন জাগ্রত মানবিকতার জন্য।
কথা হয় আনোয়ার হোসেনের সাথে। তিনি জানান, তার ৪ মেয়ে ২ ছেলে। বড় ও মেঝো মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। দুই মেয়ে এখনো বিয়ের বাকি। এক ছেলে অটোরিকশা চালাতো। এখন বেকার। আরেক ছেলে ইপিজেডে চাকরী করে। ছেলেরা কোন রকম ভাড়া করা ছোট একটি ঘরে থাকে। আর আনোয়ার হোসেন স্ত্রীকে নিয়ে তিরপল দিয়ে ঘেরা ছাপড়াতে থাকতেন।
আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, ২ ছেলে ৪ মেয়ের মধ্যে ২ মেয়ে এখনো অবিবাহিত। আমাদের ঘর নেই। তাই মেয়েদের বিয়ে দিতে পারছিলাম না৷ এখন ঘর হইছে। নিজেরাও আর রোদ বৃষ্টিতে আর কষ্ট করতে হবে না। মেয়ে দুটিকেও ভালো ভাবে বিয়ে দিতে পারবো। মনোয়ারা বেগম বলেন, যারা আমডার মত গরীব মানুষরে নতুন ঘর বানাইয়া দিছে- আল্লায় তাগরে সুখে রাখবো।
আনোয়ার হোসেনের কাছে নতুন ঘর হস্তান্তর করার পর জাগ্রত মানবিকতার উপদেষ্টা ও কুমিল্লা জেলা ক্রিকেট কমিটির সভাপতি সাইফুল আলম রনি বলেন, কুমিল্লার অসহায় মানুষদের জন্যই জাগ্রত মানবিকতা। আনোয়ার হোসেন কবর খুঁড়েন। অথচ তার একটি মাথা গুজার ঠাঁই নেই। খুব স্পর্শ কাতর বিষয়। আমার কাছে যখন খবরটি আসলো আমি সাথে সাথেই সাধ্যের মধ্যে আনোয়ার হোসেনের জন্য একটি ঘর নির্মাণ করে দেই। এখন আনোয়ার হোসেন তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে একটু ভালো থাকতে পারবে এটাই আমার স্বার্থকতা , এটাই জাগ্রত মানবিকতার স্বার্থকতা। কুমিল্লার সব অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটুক এটাই জাগ্রত মানবিকতার লক্ষ্য।