তিতা করলায় মিষ্টি হাসি কুমিল্লার পাহাড়ী কৃষকদের মুখে

এমদাদুল হক সোহাগ ♦
তিতকুটে স্বাদের করলায় হাসি ফুটেছে কুমিল্লার লালমাই পাহাড় ও কোটবাড়ি এলাকার করলা চাষীদের মুখে। দাম ভালো পাওয়ায় তাদের চোখে মুখে এখন মিষ্টি হাসি। কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে ঐতিহাসিক লালমাটির লালমাই পাহারের চূড়ায় ও পাদদেশে এবছর বাম্পার ফলনের পাশাপাশি কৃষক পেয়েছেন তাদের কাঙ্খিত দাম।

প্রতিদিনি বিকেল হলেই খেত থেকে করলা তুলে এক জায়গায় স্তুপ করে সেগুলো ওজন দিয়ে টুকরিতে ভরে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেন কৃষকেরা। তারপর পাইকাররা এসে পিকআপে করে এসব করলা কিনে কুমিল্লা সহ বিভন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন পাইকারেরা।

কোটবাড়ি এলাকার সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল জায়গা নিয়ে কৃষকেরা করলা চাষ করেছেন। সবুজের অরণ্যের মাঝে এ যেনে আরেকটি সবুজের রাজ্য। খেতের মধ্যে ঝুলে থাকা করলার কালার ও সাইজ অনেক সন্দর। দেখলে যে কারোরই নজর কাড়বে। কৃষক ও কৃষি শ্রমিকেরা গাছ থেকে করলা তুলে টুকরিতে রাখছেন। সেগুলো মাথায় করে আবার এক জায়গায় স্তুপ করছেন। অন্যরা এসব করলা ওজন দিয়ে টুকরিতে ভরে সাজিয়ে রখেে সেগুলোর উপরে পাহারি হলুদ পাতা দিয়ে ঢেকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখছেন। কোটবাড়ি এলাকায় ঘুরতে যাওয়া অনেকেই দূর থেকে এমন মনোরম দৃশ্য দেখে কাছে যাওয়ার লোভ সামলাতে পারেননা। অনেকে আবার তরতাজা করলা কিনেও খাওয়ার জন্য বাসায় নিয়ে আসেন।

 

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, লালমাই পাহার এলাকায় দীর্ঘ যুগ ধরে করলা চাষ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবছরও করলা চাষ করা হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর করলার চাহিদা ভালো থাকায় শুরুতে দাম অনেক ভালো পেয়েছেন। বিশেষ করে করোনায় মানুষ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার বেশি খাচ্ছেন। করলায় স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। সেজন্য চাহিদা ভালো থাকায় দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকেরা।

কোটবাড়ি এলাকার মঞ্জিল মিয়া নামের একজন কৃষক বলেন, জামমুড়া, উজিরপুর, সালমানপুর, লালমতি, ধনপুর, জাঙ্গালিয়া, কাছার সহ আরো অনেক গ্রামেই প্রতিবছর করলা চাষ করা হয়। ওইসব এলাকার প্রায় একশজন কৃষক করলা চাষ করেন। ওই এলাকার করলা স্থানীয় ও বাইরের পাইকারদের মাধ্যমে কুমিল্লা শহর সহ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বাজারে চলে যায়।

তিনি আরো জানান, প্রায় ত্রিশ বছর ধরে তিনি কোটবাড়ি এলাকায় করলা চাষ করেন। ওই এলাকায় বছরে তিনটি ফসল করা যায়। এবছর তিনি পাহারের নিচে ৮০ শতক জমিতে করলা চাষ করেছেন। সব খরচ হিসাব করলে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা হবে। ইতিমধ্যে তিনি লাখ টাকার করলা বিক্রি করেছেন। আরো ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার করলা বিক্রি করতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, করলা সৃজন শেষ হলেই লাউ ও শিম চাষ করা হবে।

রুস্তম আলী নামের আরেকজন কৃষক জানান, গতমাসে করলা পাইকারী দড় পেয়েছেন ৬০ টাকা কেজি করে। কাচামালের বাজার উঠানামা করে সেজন্য একেকদিন একেক দড় থাকে। বর্তমানে কত টাকা মন বিক্রি হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে ১২০০ থেক ১৩০০ টাকা মন দড়ে বিক্রি হচ্ছে। সর্বোচ্চ ২৪০০টাকাও বিক্রি হয়েছে।

জানতে চাইলে ওই এলাকার দায়িত্বে থাকা, উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফেরদৌস আহম্মেদ বলেন, এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় করলার ফলন ভালো হয়েছে। পুষ্টিগুণের কারনে করলার চাহিদা সবসময়ই ভালো থাকে।

Post Under