দৃষ্টিনন্দন কসবার বায়েক ইউনিয়ন পাহাড় ঘেরা আশ্রয়ণ প্রকল্প

মোহাম্মদ শাখাওয়াৎ হোসাইন
কসবায় মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় নির্মিত সেমিপাকা বাড়ী পেয়ে খুশি ভূমিহীন গৃহহীন কসবা উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের পাহাড় ঘেরা সীমান্তবর্তী মাদলা গ্রামের হনুফা বেগম। স্বপ্ননীড়ে আশ্রয় পাওয়া হনুফা বেগম বলেন, সারা জীবন অভাব অনটনের সংসারে শ্রম বিক্রি করে পাকা বাড়ি বানানো চিন্তা কোন দিন করিনি। বিনা মূল্যে জমি ও ঘর পেয়ে আমি খুশি। হরিপুর গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, শেখের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য আমরা এই বাড়ি পেয়েছি। বাড়ি পেয়ে চার সদস্য নিয়ে শান্তিতে বসবাস করছি। কোল্লাপাথর গ্রামের মো. হানিফ মিয়া বলেন, বিগত কোন সরকার আমাদের বিনামূল্যে জায়গাসহ রঙ্গীন টিনে পাকা ঘর পাওয়ার এমন স্বপ্ন দেখাতে পারেননি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা মাথা গোজার ঠাঁই করে দিয়েছেন। তার জন্য দোয়া করি। মাদলা গ্রাম থেকে আসা ফাতেমা বেগম বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করার সুযোগ করে দিয়েছেন। তাঁর জন্য নামাজ পড়ে দোয়া করি। শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করে দরিদ্র মানুষের সেতুবন্ধন গড়ে দিয়েছেন। আমি এক প্রতিবন্ধী মেয়ে নিয়ে অন্যের বাড়িতে থাকতাম। আশ্রয়ণ প্রকল্পে জমি ও ঘর পেয়ে খুশি হয়েছি।
মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) সকাল ১১টায় কসবা উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের মাদলা গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় সংবাদ সংগ্রহের জন্য সরেজমিনে গেলে সুবিধাভোগীরা স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে এসব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে প্রধান মন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় কসবা উপজেলায় ১৮৬৭ জন গৃহহীন ও ভূমিহীনকে বিনামূল্যে জমি ও রঙ্গিন টিন দিয়ে আধাপাকা ঘর করে দিচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে উপজেলার বায়েক ও কায়েমপুর ইউনিয়নে গৃহহীন ও ভূমিহীন ১০৪টি পরিবারের মাঝে জমির মালিকানা দলিলসহ ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। ঈদ উল আযহার পর নির্মাণাধিন ২০০টি ঘর হস্তান্তর করা হবে। অবশিষ্ট ১৫৬৩টি ঘর নির্মাণ কাজ প্রক্রিয়াধিন রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার আশ্রয়ণ প্রকল্পে সরেজমিনে দেখতে গেলে বায়েক ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন, কোন এক সময় এই এলাকায় মানুষ ভয়ে আসতোনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের লক্ষ্যে এ পাহাড়ি এলাকা আবাদ করা হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, বিদ্যুৎ, পানির ব্যবস্থাসহ পানি নিষ্কাসনের জন্য পাকা ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বায়েক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আল মামুন ভূইয়া বলেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নির্দেশনায় প্রকৃত গৃহহীন ও ভূমিহীনদের তালিকা প্রণয়ন করে নিয়মমাফিক ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এতে কোন রকম অনিয়ম হয়নি। তিনি বলেন, কসবা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদুল কাওসার ভূইয়া, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ উল আলম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাছিবা খান, উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা তাপস চক্রবর্তী ও বায়েক ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম প্রতিনিয়ত নির্মাণাধিন আশ্রয়ণ প্রকল্প তত্ত¡াবধান করছেন।
কসবা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাছিবা খান বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মনোরম পরিবেশে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় প্রথম ধাপে উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের মাদলা গ্রামে ৯৬ টি ঘর এবং কাইমপুর ইউনিয়নের মন্দবাগ গ্রামে ৮টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ বিভিন্ন সরকারি সহায়তার আওতায় সুবিধাভোগীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) সকাল ১১টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ উল আলম বায়েক ইউনিয়নের মাদলা গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধীকার ভিত্তিক প্রকল্পে সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্প এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের নিজস্ব অর্থায়নে পানি নিষ্কাসনে ৪লক্ষ টাকা ব্যয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ১২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৩৭০মিটার পাকা সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় সুবিধাভোগীদের জন্য আরো সংযোগ সড়কসহ মসজিদ নির্মাণ করা হবে। কসবায় ইতোমধ্যে প্রত্যেক পরিবারের জন্য ২শতক ভূমির উপর নির্মিত ১০৪টি ঘর গত ২৩ জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হস্তান্তর করেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য ২০০ টি ঘরের নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।

Post Under