এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের সম্পত্তি। এখানে কেনো হামলা করা হলো, সেটা আমার বোধগম্য নয়। ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে দেড়-দুইশ’ বছরের পুরনো রেকর্ডস রয়েছে। ফলে ভূমি অফিসের আওতায় বসবাসকারীরা আগামী অন্তত ৫০ বছর কষ্ট ভোগ করবেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক ধরণের নৃসংশতা চালানো হয়েছে। প্রত্যেকটা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস-বাসভবনে হামলা করা হয়েছে। ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দার ভাষাও নেই। আর এ সমস্ত কাজে ব্যবহার করা হয়েছে মাদ্রাসার কোমলমতি ছেলেদের। রাজনীতির অধিকার সবারই আছে। কিন্তু ধ্বংস কেনো? এই দেশ আমাদের সবার। দেশের সম্পদ ধ্বংস করে রাজনীতি কীভাবে? বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সার্কিট হাউজে প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ এসব কথা বলেছেন।
গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের চালানো তাণ্ডবের ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটায় এই প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। এতে আইজিপি বলেন, কিছু লোক আমাদের দেশের মানুষকে ‘কালেক্টিভ পানিশমেন্ট’ দিতে চায়। জনগণকে শিক্ষা দিতে চায়। সেই শিক্ষা দেওয়ার কারণটা কী আমাদেরকে বের করতে হবে। কিছু হলেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে হামলা করে। কারণ হলো রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মানুষ যাতায়াত করেন, সুবিধা পান। প্রত্যেকটা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস-বাসভবনে হামলা করা হয়েছে। এ সমস্ত কাজে ব্যবহার করা হয়েছে মাদ্রাসার কোমলমতি ছেলেদের। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। আশা করব এবং আমরা চাইব সবার মধ্যে শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।
আইজিপি বেনজির আহমেদ আরও বলেন, দেশে রাজনীতি করার অধিকার সবারই আছে। কিন্তু সম্পদ ধ্বংস কেনো? এই দেশ আমাদের সবার। দেশের সম্পদ ধ্বংস করে রাজনীতি করবেন কীভাবে? আশা করব প্রত্যেকের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। আগে হুজুররা রিকশায় যেতে পারতেন না। এখন অনেক বড় হুজুরদের গাড়ি আছে। অনেকে ‘হেলিকপ্টার হুজুর’ হিসেবেও পরিচিত হয়েছেন। এর কারণ হলো আমাদের অর্থনীতি ভালো হয়েছে। এখন কেনো এক শ্রেণীর লোকজন এসব ধ্বংস করছেন? ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, ধ্বংস করলে একপর্যায়ে ১৮ কোটি মানুষ এটাকে ভিন্নভাবে নিতে পারে। আমরা অনুরোধ করব এগুলো বন্ধ করেন। একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যেখানে আইনের শাসন বজায় রয়েছে, আইনের শাসনের সঙ্গে এ বিষয়গুলো যায়না।
প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আনোয়ার হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান ও পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে দুপুর পৌনে ১২টা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলো পরিদর্শন শুরু করেন আইজিপি বেনজীর আহমেদ।
উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামে মাদ্রাসাছাত্রদের ওপর হামলার খবরে গত ২৬-২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। তারা পুলিশ সুপার কার্যালয়, সিভিল সার্জন কার্যালয়, মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়, জেলা পরিষদ কার্যালয় ও জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, পৌরসভা কার্যালয় ও আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, সরকারি গণগ্রন্থাগার, সুর সম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানাসহ ত্রিশটিরও বেশি সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব ভবনেও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। প্রেস ক্লাব সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামিসহ বেশ ক’জন সাংসবাদিক আহত হয়েছেন হেফাজতকর্মীদের হামলায়।