রুমমেটের দেওয়া ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী রাবিনা ঐশী৷ শনিবার, ২০ নভেম্বর দিবাগত রাত ১২ টার দিকে প্রায় ২০ টা ঘুমের ওষুধ খেয়ে সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। বর্তমানে সে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ মোড় এলাকায় ‘বাচ্চু মিয়ার মেস’ নামক একটি ছাত্রী নিবাসে এই ঘটনা ঘটে। জ্ঞানহীন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
বাড়িওয়ালা ও মেসে অবস্থান করা অন্যান্য ছাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ১৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাবিনা ঐশী ও একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে ১৪ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জুবায়দা ফৌজিয়া নদী ওই মেসে একই কক্ষে থাকেন। কিন্তু, ১৩ তম ব্যাচের ঐশীর বান্ধবী লাবিবা ইসলাম নিয়মিত গ্রুপ স্টাডির নামে রাবিনা ঐশীর কাছে এসে থাকে। সেখানে তাদের নিয়মিত আড্ডা জমে। প্রায় দুই মাস ধরে এটিকে কেন্দ্র করে সমস্যায় ভুগছিলেন নদী।
গত শনিবার (২০ নভেম্বর) নদী মেস মালিক সোহাগ আলীকে এই সমস্যার কথা জানান। সোহাগ আলী রাবিনা ঐশীকে তার গেস্ট সংখ্যা ‘লিমিটে’ আনতে বলেন। এটিকে কেন্দ্র করে সন্ধ্যায় তাদের মাঝে কথা কাটাকাটি হলে ঐশী এই ঘটনা তার বিভাগের সিনিয়র ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ১১ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মো. এরশাদ হোসাইনকে জানায়। এরশাদ একই ব্যাচের প্রণব চক্রবর্তীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হলের আরও কিছু আবাসিক শিক্ষার্থী নিয়ে বাড়িওয়ালাকে খুঁজতে খুঁজতে মেয়েদের মেসের ভিতর প্রবেশ করে।
জুবায়দা ফৌজিয়া নদী অভিযোগ করেন, মেসে ঢুকে এরশাদ প্রণবসহ আরও কয়েকজন তাকে শাসান। তিনি বলেন, ‘উনারা মেসে ঢুকে আমাকে বলে তোরে মাইরা ফালাইয়া রাইখা যামু কেউ টেরও পাইব না, তোর বাপ-মা শিক্ষা দেয় নাই? ক্যাম্পাসে কেমনে ফ্রীলি চলিস দেইখা নিমু নে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় নদী সাহায্যের জন্য তার ছেলে বন্ধু রিয়াজসহ অন্যান্যদের মেসের ভিতরে ডেকে আনে। এসময় দুই পক্ষের মাঝে উচ্চবাচ্য হয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বাড়িওয়ালা দুই গ্রুপকে নিয়ে নিচে নেমে যান। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল ইসলাম মাজেদসহ কয়েকজন সে সময় উপস্থিত থাকায় বাড়িওয়ালা ও শিক্ষার্থীদের সাথে বসে শিক্ষার্থীদের নিজেদের মধ্যে রুম পরিবর্তনের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান করেন। ঐশিকে রুম ছেড়ে দিতে বলেন।
ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী এরশাদ বলেন, ‘আমাকে ছোট বোন ঐশি ফোন দিয়ে কান্না করে বলে তার মেসে সমস্যা হয়েছে। পরে আমি মেসের নিচে গিয়ে তাকে ফোন দিলে তখনও ঐশির কান্না ও বিপরীত পাশ থেকে পুরুষের কণ্ঠ শুনতে পাই। মেয়েদের মেসে পুরুষের কণ্ঠ শুনে চিন্তিত হয়ে মেসে প্রবেশ করে দেখি মেস মালিকসহ নদী আর ঐশির মাঝে উচ্চবাচ্য হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ঘটনা জানতে চেয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে নদীর ছেলে বন্ধুরাও মেসে আসে। তখন তারা আমাদের সাথে উচ্চবাচ্য করলে তাদেরকে নিয়ে মেমেসে বাহিরে চলে যাই। এরপর ইলিয়াস ভাই বিষয়টি সমাধান করেছেন। কিন্তু সমধান করার পরও নদী মিথ্যা-বানোয়াট তথ্য দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করার উদ্দেশ্য কি সেটা বুঝলাম না।’
মেস মালিক সোহাগ আলী বলেন, ‘আমাকে নদী অভিযোগ জানিয়েছিল যে তার রুমমেট ঐশি বান্ধবী নিয়ে রুমে আড্ডা দেয় এতে তার ডিস্টার্ব হয়। আমি ঐশিকে বলেছিলাম যেন এমন আর না করে। এরপর আজ সন্ধ্যায় নদীর মা আমাকে ফোন দিয়ে বলে তার মেয়ে নাকি কান্না করতেছে। সাথে সাথেই আমি সেখানে যাই। আমি যাওয়ার দুই থেকে তিন মিনিটের ভিতরে ঐশির ছেলে বন্ধুরা মেসে আসে। এরপর তাদের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়। কিন্তু কেউ কাউকে গালিগালাজ বা মারধর করার হুমকি দেয় নি। আমি নিজে সেখানে উপস্থিত ছিলাম।’
তিনি আরো বলেন, ‘এরপর নদী আপুর ছেলে বন্ধুরাও মেসে আসে। দুই পক্ষের মাঝে আবারও কথা কাটাকাটি হয়। তারপর ছেলেদের সবাইকে নিয়ে মেসের বাহিরে এনে ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস সহ কয়েকজনের উপস্থিতিতে বিষয়টা প্রাথমিকভাবে সমাধান হয়।’
বিষয়টি সমাধানের পর রুমে ফিরে গিয়ে ২০১৯-২০ সেশনের জুবায়দা ফৌজিয়া নদী জীবন ও সম্ভ্রম নিয়ে শঙ্কায় আছেন উল্লেখ করে একটি স্ট্যাটাস দেন। তার ওই স্ট্যাটাস ছড়িয়ে পড়লে কমেন্টে নানা ধরনের কটু মন্তব্য করেন অনেকেই। নদীর স্ট্যাটাসে লেখা সবকিছু মিথ্যা ও বানোয়াট এমন অভিযোগ তুলে পাল্টা স্ট্যাটাস দেন ঐশি। এরপর মানসিক চাপে পড়ে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্তব্যরত ড. শাহজালাল এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। এখন তাকে আইসিইউতে রাখা দরকার। তাই আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যেতে বলেছি।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমার কাছে একজন লিখিত অভিযোগ দিয়ে গিয়েছে। আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করবো। আরেকজন শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি তাই তাড়াহুড়ো করছি না। দুই পক্ষের কথা শুনেই সমাধান দেয়া হবে।’