এমদাদুল হক সোহাগ
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেষ পর্যন্ত ভেঙে গেছে কুমিল্লার গোমতী নদীর বাঁধ। এর ফলে লোকালয়ে হু হু করে পানি ঢুকছে। এরই মধ্যে প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক পৌনে বারোটার দিকে গোমতী নদীর উত্তর পূর্ব পাশে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের মিথিলাপুর এলাকার বুরবুড়িয়া বাঁধের নিচ দিয়ে ফুটো হয়ে গরাত বড় হতে থাকে, একপর্যায়ে তা ভেঙে যায়। প্রায় ১০০মিটার এলাকাজুড়ে এই বাঁধ ধসে যায়। এতে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়ার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই ওই এলাকার বুরবুড়িয়া বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা করে আসছিলেন। অবশেষে রাত বারোটার দিকে স্থানীয়দের আশঙ্কাই সত্যি হলো।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোমতীর পানির প্রবল স্রোত ও ঢেউয়ের এক পর্যায়ে বুরবুড়িয়া বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। এসময় স্থানীয়রা ফাটল বন্ধ করতে গিয়ে দেখে সেখানে গভীর গর্ত সৃষ্টি হয়ে পানি বের হচ্ছে। এক পর্যায়ে পানির স্রোত বাড়তে থাকে ও সেই গর্তের আকার বড় হতে থাকে ও সেখান দিয়ে প্রবল গতিতে পানি বের হতে থাকে।
একপর্যায়ে বাঁধের বিশাল জায়গা ভেঙ্গে পানিতে প্লাবিত হয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাঙা অংশের পরিমাণও বাড়ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গ্রামগুলো হচ্ছে- বুড়বুড়িয়া, খাড়াতাইয়া, নানুয়ার বাজার, কিং বাজেহুরা, মিথিলাপুর, শিকারপুর, মহিষমারা, ইছাপুরা, পয়াত, গাজীপুর, কণ্ঠনগর, মাওরা, গোপীনাথপুর, জগৎপুর ও গোসাইপুর।
এদিকে স্থানীয়রা বাঁধ এলাকায় এবংআশপাশের লোকজনদের রাত থেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা শুরু করেন।শুক্রবার ভোর বেলা থেকেও বাঁধ ভাঙ্গার কারণে যেসব এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে সেখান থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন বলেন, পানির তীব্র স্রোতে ধসে যাওয়া বাঁধের আয়তন বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে কুমিল্লার বুড়িচং এবং ব্রাক্ষণপাড়া উপজেলা শতভাগ প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আকতার বলেন, বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া অংশে পানি বাঁধের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রবল প্রবাহের সাথে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। সবাইকে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার অনুরোধ করছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জমান জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে ওই স্থানের নিচ দিয়ে পানি বের হচ্ছিল। স্থানীয় লোকজন বালুর বস্তা ফেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু রাত পৌনে ১২টার দিকে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে।