এমদাদুল হক সোহাগঃ
কুমিল্লার চাপাপুরে অবস্থিত বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের (বিজিডিসিএল) বিরুদ্ধে ব্যাপক চাঁদাবাজিরঅভিযোগ উঠেছে। অনিয়ম–দুর্নীতির ট্যাগ লাগানো প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে কুমিল্লা সহ দেশজুরে সমালোচনার শুরু হয়েছে। বিশেষকরে অর্থনৈতিক মন্দা এবং বিদ্যুতের ঘাটতির সময় কোম্পানীটির ৪৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কোটি টাকা ব্যায়ে রাজকীয়আয়োজনের পর সমালোচনার বন্যা বয়ে যাচ্ছে কুমিল্লায়। প্রশ্ন উঠেছে এই আয়োজনের অর্থ এসেছে কোথা হতে? সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমেও বইছে নিন্দার ঝড়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা অঞ্চলের সিএনজি ফিলিং স্টেশন (সিএনজি পাম্প) এবং বড় বড় গ্রাহকের কাছ থেকে অনেকটাজোর করেই প্রতিষ্ঠাবর্ষিকীর অনুষ্ঠানের নামে চাঁদা উঠানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর নামে এভাবে চাঁদাবাজিতে ফুসে উঠেছেনসিএনজি পাম্প মালিকেরা। বাখরাবাদের কাছে তারা জিম্মি বলে কেউ আর ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারছেন না।
চাঁদাবাজির নেপথ্যে মূল কারিগর বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রবিউশন কোম্পানী লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শঙ্কর মজুমদারবলে জানিয়েছেন একাধিক সিএনজি ফিলিং স্টেশন মালিক। তবে অভিযোগকারীগণ ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশকরেছেন। তারা আরো জানান, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে কোটি টাকা ব্যয় হলেও চাঁদাবাজি হয়েছে কয়েক কোটি টাকা! যাপ্রকিষ্ঠানটির এমডি ও তাঁর কিছু লোকের পকেটে ঢুকেছে। তাছাড়া এমডির চাকরির মেয়াদ রয়েছে আর ছয় মাসের মতো। শেষসময়ে এমন আয়োজন দেখিয়ে পকেট ভারি করার গুঞ্জন চলছে বাখরাবাদে। অন্যদিকে ভূয়া ভাউচার দেখিয়ে বাখরাবাদের কোটিকোটি টাকা লুপাটেরও অভিযোগ উঠেছে শঙ্কর মজুমদারের উপর।
জানা যায়, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রবিউশন কোম্পানী লিমিটেড এর ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ৯ ও ১০ জুন দুই দিনব্যাপীরাজকীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, শত শত অতিথি, খাবার দাবার, পুরো বাখরাবাদ অফিসএলাকা বিয়ে বাড়ির ন্যায় আলোকসজ্জা, শিল্পীদের ভাড়া করে নাচ–গান, উপহার কোন কিছুরই যেন কমতি ছিলনা।আশপাশের এলাকায় যখন লোডশেডিং তখন বাখরাবাদ এলাকায় আলোকসজ্জা দেখে অনেকটা হতবাক করেছেএলাকাবাসীকে। বিদ্যুতের অপব্যায়ে ক্ষোভে অনেকটা ফুসে উঠেছেন তারা। প্রশ্ন তুলেছেন এই আয়োজনের অর্থ কোথায় পেলেনকর্তৃপক্ষ?
স্যাটেলাইট টেলিভিশন যমুনা টিভির প্রতিবেদকের করা এইসব প্রশ্নের কোনটারই সদোত্তর দিতে পারেননি বাখরাবাদ গ্যাসডিস্ট্রবিউশন কোম্পানী লিমিটেড এর এমডি শঙ্কর মজুমদার।
কুমিল্লা–৬ আসনের ( আদর্শ সদর, সিটি কর্পোরেশন, সেনানিবাস এলাকা) সংসদ সদস্য ও কুমিল্লা মাহনগর আওয়ামীলীগেরপ্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, বাখরাবাদে এখন যারা প্রশাসন চালায় তাদেরঅধিকাংশই এন্টি আওয়ামীলীগ, জামায়াত বিএনপি মাইন্ডের লোক এখানে ঘাপটি মেরে বসে আছে। সরকারের নির্দেশনা তারাঅনেকাংশে মানতে চায়না।
সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, ৪৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এমন কোন বার্ষিকী নয়যেটাকে এভাবে উদযাপন করতে হবে। যদি ৫০তম, ৭৫ তম বা ১০০তম হতো তাহলে কথা ছিলো। এত অর্থ ব্যয় করার কোনমানে নেই। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুমিল্লার সভাপতি আগমগীর শিকদার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা না মেনেকোটি টাকা ব্যয় করে এমন আয়োজন অত্যন্ত ন্যক্কারজনক।
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কুমিল্লার সভাপতি কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুল নিন্দা জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেরকাছে আবেদন জানাচ্ছি যাতে যথাযথ তদন্ত করে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।