এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
অধ্যক্ষ অলিউল্লা ছোবহানী। নিজের নামেই গড়েছেন মহিলা মাদ্রাসা। একাধিক সন্তানের পিতা হয়েও কৌশলে ছাত্রীকে মাদ্রাসা সংলগ্ন ঘরে নিয়ে ধর্ষণ, ছাত্রীর ‘আত্মহত্যার উদ্যোগ’ নস্যাতে কথিত বিয়ের নাটক, ঘটনা ধামাচাপায় অপচেষ্টার অভিযোগে অবশেষে আদালতে মামলা করলেন ওই ছাত্রীর মা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা হবার পর পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (১৭ আগস্ট) জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ ছাত্রীর মা নাছিমা বেগম বাদী হয়ে আশুগঞ্জ উপজেলার তারুয়া জামিয়া ছোবহানীয়া মহিলা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. অলিউল্লা ছোবহানীর(৩৫)বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। ঘটনার পর কথিত বিয়ের নাটক সাজানো, পুরো ঘটনা ধামাচাপার অপচেষ্টায় লিপ্ত হওয়ায় অধ্যক্ষের পিতাসহ পাঁঁচজনকে আসামী করা হয়। আদালত অভিযোগের আমল গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) কে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব প্রদান করেছেন।
আদালতে দায়েরকৃত মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. অলিউল্লা ছোবহানী গত দু’মাস আগে তারুয়া গ্রামে জামিয়া ছোবহানীয়া মহিলা মাদ্রাসাটি চালু করেন। মহিলা মাদ্রাসা হওয়া সত্বেও এর সঙ্গে নিজে থাকার জন্যে নির্মাণ করেন একটি ঘর। নাছিমার পাঁচ সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ কন্যা খাদিজাতুল কোবরাকে(১৬) প্রতিষ্ঠার পরই ওই মাদ্রাসায় ভর্তি করান। ভর্তির কয়েকদিন পরই ছাত্রীর উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে বিবাহিত-কয়েক সন্তানের জনক অলিউল্লাহ ছোবহানীর। নানান প্রলোভনে কু-প্রস্তাব দিতে থাকেন। ভুল বুঝিয়ে মাদ্রাসার লাগোয়া অধ্যক্ষ থাকার ঘরে ডেকে নিয়ে হাত-পা টেপানো, শরীর ম্যাসাজ করতে বাধ্য করা এবং এব্যাপারে মুখ বন্ধ রাখতে ভয়ভীতি দেখায় অলিউল্লা। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৯ আগষ্ট অধ্যক্ষ মাদ্রাসা লাগোয়া ঘরে ছাত্রীটিকে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ঘটনার পর ছাত্রীটি ‘আত্মহত্যা করবে’ জানালে অধ্যক্ষ অলিউল্লা ছোবহানী তাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে কয়েকটি ডায়েরির পাতায় বিয়ের কথাবার্তা লিখে তাতে ছাত্রীটির স্বাক্ষর নেয়।ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কাজীপাড়া মহল্লার মো.আশরাফুর রহমান,সদর উপজেলার হাবলাউচ্চ গ্রামের মো. কেফায়েত উল্লাহ এবং আশুগঞ্জের যাত্রাপুর গ্রামের মো.আবুল বাশার আইয়ুবীকে ওই বিয়ের উকিল-স্বাক্ষী বানিয়ে ডায়েরির পাতায় তাদেরও স্বাক্ষর নিয়ে ছাত্রীকে ‘বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে’ বলে আশ্বস্ত করেন। ওই তিন উকিল-স্বাক্ষী এবং ঘটনা ধামাচাপা দিতে তৎপর অলিউল্লা ছোবহানীর পিতা আবদুল ছোবহানকেও আসামী করা হয়।
এদিকে অধ্যক্ষ অলিউল্লা ছোবহানীর বিরুদ্ধে বলাৎকারের অনেক অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় এলাকায় সালিশ-বৈঠক করে তার থেকে জরিমানাও আদায় করা হয়। তার বিরুদ্ধে নিজের নামে গড়া মাদ্রাসার নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা উত্তোলন করে নিজের সহায়-সম্পদ গড়ার কাজে ব্যবহার করা ছাড়াও নানান অপকর্ম করে বেড়ানোর অভিযোগ এলাকাবাসী মুখে মুখে। এসব বিষয়ে জানতে অধ্যক্ষ অলিউল্লা ছোবহানীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেন নি।