নিজস্ব প্রতিবেদক:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ভুয়া পদবী ব্যবহার করে মেডিকেল সার্টিফিকেট (এমসি) বানিজ্য চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। অভিযুক্ত ওই চিকিৎসকের নাম মোঃ ফাইজুর রহমান (ফয়েজ)। মামলা সক্রান্ত ইনজুরি সার্টিফিকেট, অসুস্থ্যতা জনিত সার্টিফিকেট সহ বিভিন্ন সার্টিফিকেটে তিনি নিজেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) পদবী ও স্বাক্ষর ব্যবহার করছেন। অথচ অনুসন্ধানে দেখা যায়, অভিযুক্ত ওই চিকিৎসক সেই পদে নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল থেকে আরএমও হিসেবে দায়িত্বে আছেন ডা. মো: সুমন ভূইয়া। সরকারী ওয়েব সাইটেও সেই তথ্য দেখা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অভিযুক্ত চিকিৎসক মোঃ ফাইজুর রহমান (ফয়েজ) এ বছরের ২২ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত আরএমও হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২৯ ফেব্রুয়ারী তিনি বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু সেখানে তিনি অনুপস্থিত থাকার কারনে মন্ত্রণালয় থেকে শোকজ করা হয় (যার স্মারক নং-উস্বাক/আম/২০২৪/২৮৩ তারিখ ১১/৫/২০২৪ এবং উস্বাক/আম/২০২৪/৩৪০ তারিখ ০১/৬/২০২৪), পরবর্তীতে বেতন ভাতা বন্ধ করে রাখা হয়েছে তার।
জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও ডাঃ ফাইজুর রহমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কুমারশীল মোড়ের “নাজ মেডিকেল সেন্টার” ও আশুগঞ্জের “আশুগঞ্জ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে” নিয়মিত রোগী দেখছেন এবং সার্টিফিকেট বাণিজ্য করে যাচ্ছেন। গত ০৬ নভেম্বর দেওয়া এক ব্যক্তির মেডিকেল সনদে নিজেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের আরএমও পদবীর সিল স্বাক্ষর ব্যবহার করার প্রমাণ মিলেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. মো: সুমন ভুইয়া জানান, হাসপাতালটিতে তিনজন আরএমও কর্মরত আছেন। ডা. ফয়েজ একসময় সদর হাসপাতালের আরএমও ছিলেন বর্তমানে নেই।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ডাঃ ফায়জুর রহমান বিগত সরকারের আমলে চিকিৎসকদের মধ্যে প্রভাবশালী ছিলেন। হাসপাতালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়কের মৃত্যু ও বিভিন্ন অনিয়ম, নারী কেলেঙ্কারী সহ বিভিন্ন অভিযোগে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। আওয়ামীলীগ সরকার পরিবর্তনের পর তিনি বিএনপির এক প্রভাবশালী নারী নেত্রীর ছত্রছায়ায় আবারো ক্ষমতাবান হয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, মুঠোফোনে ডাক্তার ফাইজুর রহমান জানান, তিনি চাকরি থেকে অব্যহতি নিয়েছেন। অব্যহতি চেয়ে করা আবেদনের কোন কপি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাকে বরগুনায় বদলী করার পর সেখানে জয়েন করলেও অনুপস্থিত আছি দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে। আমার বেতন ভাতাও বন্ধ। বরগুনা যেতে আসতেই দুদিন লাগে। সেজন্য চাকরি করবোনা বলেই আর কর্মস্থলে যাচ্ছিনা। সরকারী নীতিমালা অনুযায়ি কর্মস্থলে অনুপস্থিত ও বেতন ভাতা বন্ধ থাকলে অটোমেটিকভাবেই চাকরি চলে যায়। সেজন্য নতুন করে অব্যহতি পত্র জমা দেয়া হয়নি। সার্টিফিকেট বানিজ্যের অভিযোগের বিষয়ে বলেন, এমন অভিযোগ সত্য নয়। যদি কোন এমসি সার্টিফিকেটে আমার পুরনো পদবীর সিল পড়ে থাকে তাহলে সেটা ভুলে হতে পারে অথবা কেউ ইচ্ছেকৃত ভাবে আমার স্বাক্ষর নকল করতে পারে। প্রভাব বিস্তারের বিষয়ে তিনি আরো জানান, আমি নিরিহ মানুষ, আমার কোন প্রভাব নাই। আমি সাধারণ রোগের চিকিৎসা দেই। কোন অপারেশনও করিনা। কেউ হয়তো আমার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে এসব অভিযোগ করেছেন।