রাজস্ব আদায়ে ডিজিটাল অগ্রযাত্রা: অনলাইন ভ্যাট রিটার্ন জমায় শ্রেষ্ঠত্বে কুমিল্লার ট্রিপল হ্যাট্রিক

নিজস্ব প্রতিবেদক:
টানা লকডাউনের মধ্যেও কুমিল্লা কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট তাদের সফলতা ধরে রেখেছে। নবম বারের মত অনলাইন ভ্যাট রিটার্ন জমায় দেশ সেরা হয়েছে। কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষীপুর ও ফেনী জেলা নিয়ে কুমিল্লা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট গঠিত। কুমিল্লা কমিশনারেট অফিস থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় ছয় জেলা। দেশের ডিজিটাল অগ্রযাত্রায় অর্ধেকেরও কম জনবল নিয়ে একের পর এক সাফল্য অর্জন করছেন তারা। এ যেন ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিরলস প্রচেষ্টার ফসল। পাশাপাশি ছয় জেলা নিয়ে গঠিত ভ্যাট কুমিল্লা অঞ্চলের জন্যও অনন্য প্রাপ্তি।
এ রমজানে ব্যবসায়ীদের মনোযোগ ছিলো বেচাকেনায়। অনলাইন রিটার্নের তথ্য উপাত্ত পাওয়া কঠিন। ১৫ তারিখের রাত ১২ টা ছিলো রিটার্ন জমার শেষ সময়। এ দিকে পবিত্র ঈদুল ফিতরও চলে এসছে। টানা লকডাউন, মাহে রমজান ও পবিত্র ঈদুল ফিতর নিয়ে কর্মকর্তারা রিটার্ন দাখিল নিয়ে ছিল চিন্তিত; তবুও থেমে থাকেনি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কুমিল্লার (সিইভিসি) কর্মবিলাসী টিম। চালিয়েছেন তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা। কিভাবে অনলাইন রিটার্ন দাখিল সফল করা যায় সেজন্য ঈদের ছুটির আগের দিন কমিশনারের কক্ষে মিটিং করে কর্মকর্তাদের মধ্যে কাজ ভাগ করে দেয়া হয়। অনেক কর্মকর্তা স্বেচছায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি ভোগ করেননি। কেউ কেউ ছুটি নিয়েও ছুটি বাতিল করে অফিস করেন অনলাইন রিটার্ন দাখিলে সাফল্য ধরে রাখার জন্য । ১৭ মে দীর্ঘ প্রতীক্ষার ফলাফল পাওয়া যায়। ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের ইমেইল হতে দেখা যায় যে এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কুমিল্লার (সিইভিসি) কর্মবিলাসী টিমের এপ্রিল মাসের রিটার্ন দাখিল হার ৯৬.০৮ শতাংশ। এতে করে প্রাণচাঞ্চাল্য ফিরে আসে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নানা বৈরিতার মধ্যে কাজ করতে হয় টীমকে। অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন জমাদানের সময় সার্ভারে ক্রটি, বিদ্যুৎ ভোগান্তি সহ নানান সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বসে থাকেনি এ কমিশনারেটের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে কুমিল্লা ভ্যাট অন্যান্য মাসের মতো এপ্রিল মাসেও অনলাইন ভ্যাট রিটার্ন জমা করেছে।

এই প্রতিযোগিতায় গত ০৯ মাস ধরে প্রথম স্থান ধরে রেখেছে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, কুমিল্লা। এপ্রিল মাসে এই কমিশনারেটে অনলাইনে রিটার্ন জমা হয়েছে ৯৬.০৮%। ম্যানুয়াল ও অনলাইন সহ রিটার্ন দাখিলের হার ৯৬.২১%। এরকম ব্যতিক্রমি সাফল্যের পিছনে রয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপায়নের অঙ্গীকারে সক্রিয় থাকা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কুমিল্লার (সিইভিসি) কর্মবিলাসী টিম। আর এ টিমকে ক্যারিশমেটিক নেতৃত্ব দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মূল কারিগর হলেন কুমিল্লা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী। তিনি কমিশনার হিসেবে যোগদানের পরই একের পর এক সাফ্য পেতে থাকে কুমিল্লা কাস্টমস।

টানা ০৯বার প্রথম হওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে সহকারী কমিশনার (সদর দপ্তর, কুমিল্লা) মোহাম্মদ ছালাউদ্দিন রিপন বলেন, মহামারী আছে, থাকছে। দেশের অর্থনীতির ভীততও দূর্বল হতে দেয়া যাবে না। তাই ঈদের বন্ধের মধ্যেও কুমিল্লার কর্মপ্রবণ টীম তাদের আন্তরিকতা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। টানা লকডাউনেও ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। দলবদ্ধ প্রচেষ্টা ও প্রতিযোগিতা এ অভূতপূর্ব সাফল্যের মূল নিয়ামক। কুমিল্লা কমিশনারেটের নেয়া ব্যতিক্রমী উদ্যোগ কুমিল্লাকে সেরার আসন ধরে রাখতে উদ্বুদ্ধ করেছে। কুমিল্লার এই স্পন্দন অন্যান্য কমিশনারেটগুলোর মধ্যে তৈরি করেছে নতুন উদ্দীপনা। ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সামগ্রিক রিটার্ন পেশের হার বাড়ছে।

পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জুলাই ২০২০ মাসের অনলাইন রিটার্ন দাখিল হার ছিল ২৫.১৮%, যা বর্তমানে এপ্রিল ২০২১ মাসে দাঁড়ায় ৪২.৪৮%। অন্যান্য কমিশনারেটগুলোর মধ্যেও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, ঢাকা (উত্তর), ঢাকা (দক্ষিণ), ঢাকা (পূর্ব) ও ঢাকা (পশ্চিম) এর রিটার্ন দাখিলের হার ক্রমান্বয়ে প্রায় দ্বিগুন হয়েছে। কুমিলস্না কমিশনারেটের আগস্ট মাসের রিটার্ন দাখিলের হার ৯১.১৮%, সেপ্টেম্বর মাসে ৯৩.৮৭%, অক্টোবর মাসে ৯৪.১৬%, নভেম্বর মাসে ৯৩.৮০%, ডিসেম্বর মাসে ৯৪.৯৯%, জানুয়ারি মাসে ৯৭.০৯%, ফেব্রম্নয়ারি মাসে ৯৭.২৮%, মার্চ মাসে ৯৫.৪৭% ও এপ্রিল মাসে ৯৬.০৮%।

‘আলোকিত কাস্টমস, আলোকিত দেশ’ ও ‘অতিক্রম নয় ব্যতিক্রম’ শ্লোগানে উদ্বুদ্ধ হয়ে অর্থবছরের প্রথম থেকে কাজ করছে কুমিল্লা টিম। আলোকিত কাস্টমসের মাধ্যমে গড়ে উঠবে আলোকিত বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাবে দুর্বার গতিতে। সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের উন্নত বাংলাদেশ গঠনে অহর্নিশ কাজ করছে বাংলাদেশ কাস্টমস। আর সে স্বপ্ন পূরণের পথে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, কুমিল্লা এনবিআরের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় কাজ করে যাচ্ছে। সাফল্য সংক্রামক হোক। জাতি হিসেবে আমার বিশ্বের রোল মডেল থাকবো।

Post Under