কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ইংরেজি বিভাগের দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে মারামারির ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের হেনস্তার শিকার হয়েছেন দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রুদ্র ইকবাল।
সোমবার (২৯ মে) দুপুরে ইংরেজি বিভাগের ১৫ তম ব্যাচের দুই শিক্ষার্থী হীরা মিয়া ও আরমান উদ্দিনের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরবর্তীতে হীরার সমর্থনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংলগ্ন আনসার ক্যাম্পের সামনে আরমানকে মারধর করে সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহি সমর্থিত শাহাদাত তানভীর রাফি, নওশীন আল ইসলাম, সাইফ আদনান, ফয়সাল, সজীব, আরিয়ান অঞ্জন ও তন্ময়সহ ১০ থেকে ১২জন ছাত্রলীগ কর্মী।
এ ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে দৈনিক যায়যায়দিন’র সাংবাদিক রুদ্র ইকবালকে হেনস্তা করেন রেজা সমর্থিত আসিফ এন্তাজ রাব্বি, অমিত সরকার ও সাদ্দামসহ অন্যান্যরা।
রেজা-ই-এলাহি শাখা ছাত্রলীগের ছয় বছর আগে বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এরপর তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি তিনি কুবি শাখার নতুন কমিটিতে সভাপতি পদপ্রার্থী বলে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন। তার নেতৃত্বে সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের দিয়ে ফাঁকাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ এবং মারামারির অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, মারধরের ঘটনার জের ধরে বিকেল ৪টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতেই ফের সাংবাদিকদের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করেন রেজা-ই-এলাহি, মাহি হাসনাইন, আমিনুর বিশ্বাস, ওয়াসিফ, আসিফ এন্তাজ রাব্বি, নূরউদ্দিন হোসাইন, রাকিব হোসাইন, রাকেশ দাস, সাদ্দাম, মাহাবুব, মাসুম, নওশীন, রাফিসহ অন্যান্যরা। এসময় উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের দিকে তেড়ে আসতেও দেখা যায় তাদেরকে। এদের মধ্যে রেজা-ই-এলাহি ও তার অনুসারী হেনস্তাকারীদের অনেকেরই নিয়মিত ছাত্রত্ব নেই।
এ সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে রেজা-ই-এলাহি বলেন, ‘সাংবাদিকরা এখনও আমাকে চিনে না, আমি কে! এই ক্যাম্পাস কারো বাপের না। সাংবাদিকরা আমাদের কী করবে, দেখে নেব। গুণ্ডামির কী দেখছো।’ এ ঘটনার পর রেজা সমর্থিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে মিছিল করেন।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক রুদ্র ইকবাল বলেন, ‘আমি আমার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলাম। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিনা উস্কানিতেই আমার ওপর হামলে পড়ে।’
এসব বিষয়ে রেজা-ই-এলাহি বলেন, ‘আমি সাংবাদিকদের হেনস্তা করিনি। তারা আমাদের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করেছে। বিশৃঙ্খলাকারী কেউ আমার কর্মী নয়।’ নিয়মিত ছাত্র না হয়েও আপনি ক্যাম্পাসে মিছিল করতে পারেন কি না-এমন প্রশ্নে রেজা-ই-এলাহি বলেন, ‘এটা প্রশাসনকে জিজ্ঞেস করেন। আমাকে কেন? আমি সবকিছুই করতে পারি। প্রশাসন এই বিষয়ে অবগত আছে।’
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘রেজা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভিনিং এমবিএ করছে। তবে ক্যাম্পাসে কেউ কিছু করতে চাইলে অবশ্যই প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যে দু’জন শিক্ষার্থী বিশৃঙ্খলা করেছে, তাদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাইনি। তারা বলছে তারা মিউচুয়াল হয়ে গেছে। আমরা প্রক্টরিয়াল বডি এখানে মধ্যস্থতা করেছি।’ তবে সাংবাদিক হেনস্তার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি প্রক্টর।
অন্যদিকে, পদ প্রত্যাশীর কথা বলে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তাদেরকে পদে আনার কোনো প্রশ্নই আসে না জানিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান বলেন, ‘এই মুহুর্তে কুবি ছাত্রলীগের কোনোো সাংগঠনিক কমিটি নেই। কেউ ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে কোনো অপকর্ম করলে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তার দায়ভার নেবে না।’ ইনান আরও বলেন, সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করবো, তারা যেন এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে।