সোহেল ও হরিপদের হত্যাকারিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হবে- এমপি বাহার

দেলোয়ার হোসেন জাকির

কার্যালয়ে ঢুকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেল এবং আওয়ামী লীগ কর্মী হরিপদ সাহাকে এলোপাতাড়ি গুলি করে খুনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দ্রæত বিচারের দাবি জানিয়েছে নিহতের স্ত্রী, ছেলে ও দুই কন্যা সন্তান।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টায় নিহতের বাড়িতে যান কুমিল্লা সদর (৬) আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। এসময় নিহত সোহেলের স্ত্রী, ছেলে ও দুই কন্যা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের আটক করে দ্রæত বিচারের দাবি জানান। একই দাবি জানান নিহত আওয়ামী লীগ কর্মী হরিপদ সাহার স্বজনরা। নিজ কর্মী নিহত হওয়ায় ব্যাথিত এমপি বাহার দুই নিহতের বাড়িতে গেলে স্বজনদের আত্মচিৎকার ও আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে।
এ সময় এমপি বাহার উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, “একটি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টিকে এগিয়ে নিতে নিজেকে আত্মনিযোগ করেছিল সোহেল, আমি তাকে সেভাবেই তৈরি করেছিলাম, আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত কর্মী ছিল সে। এমপি বাহার বলেন, সোহেল হত্যাকান্ডের জন্য আমার, দলের এবং ১৭ নং ওয়ার্ডের মানুষের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুরণ হবার নয়। সোহেল নির্বাচিত হয়ে আমার সাথে কথা বলে ১৭ নং ওয়ার্ডের অনেক উন্নয়ন করেছে, আমি তাকে সবসময় সহযোগিতা করেছি। এই ঘটনার সাথে যারাই জড়িত তাদেরকে দ্রæত আটক করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। ”
এদিকে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মাসুম নামের আরেকজনকে আটক করেছে পুলিশ। কুমিল¬ার চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে মো. মাসুমকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাসুম হত্যা মামলায় ৯ নম্বর আসামি। এ নিয়ে মামলায় গ্রেপ্তার হলো দুইজন।
এর আগে কুমিল¬া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে মো. সুমন নামে একজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশ। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহান সরকার। তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট যৌথ অভিযান চালিয়ে মাসুমকে গ্রেপ্তার করে। কোথাও পালিয়ে যেতে মাসুম চান্দিনা বাসস্ট্যান্ডে এসেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেল এবং আওয়ামী লীগ কর্মী হরিপদ সাহাকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দ্রæত আটক ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন এবং সমাবেশ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে এই কর্মসূচির আয়োজন করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র, সকল ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও অংশগ্রহণ করে।
মানববন্ধন ও সমাবেশে কুসিক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, কুমিল্লার ইতিহাসে এমন নৃশংস ঘটনা অতীতে ঘটেনি। এই ঘটনাকে এখানেই থামাতে হবে, না হলে এমন খুনের ঘটনা ঘটেই যাবে। কাউন্সিলর সোহেল একজন জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি ছিলেন। তাকে এভাবে খুন করা হলো, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?
তিনি বলেন, খুনের পরিকল্পনাকারী ও মূল ঘাতকরা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। দ্রæত তাদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি। এই হত্যার বিচার এবং আসামিদের দ্রæত গ্রেপ্তার করা না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবো। আমরা আমাদের নিরাপত্তা চাই।
এ সময় বক্তব্য রাখেন কুসিক প্যানেল মেয়র জমির উদ্দিন খান জম্পি, কাউন্সিলর মঞ্জুর কাদের মনি, কাউন্সিলর সরকার মো.জাবেদ, মাসুদুর রহমান মাসুদ, নারী কাউন্সিলর নুর জাহান আলম পুতুল, নাদিয়া নাসরিন, কাউসারা বেগম সুমি, উম্মেসালমা সহ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সকল কাউন্সিলগণ। মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে একই দাবিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে কাউন্সিলর সোহেল নিজ কার্যালয়ে বসে রাজনৈতিক কর্মীদেরকে নিয়ে একটি বৈঠক করছিলেন। এ সময় অন্তত ১০ জন কালো মুখোশধারী সন্ত্রাসী ওই কাউন্সিলরকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। এতে গুলিবিদ্ধ সোহেল সাথে সাথেই নিজের চেয়ার থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গুলির আওয়াজে আশপাশের মানুষ ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীরা পাশের বউবাজার এলাকা দিকে পালিয়ে যায়। এ সময় হামলাকারীরা গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে স্থানীয়রা গুলিবিদ্ধ কাউন্সিলরসহ আহতদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ওই দু’জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ আরও ৫ জন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

Post Under