শফিউল সজীবঃ
প্রকৃতি প্রেমিকদের পদচারনায় আবারো মুখরিত হয়ে উঠেছে ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার আখাউড়ার উপজেলার পাহাড় ঘেরা পদ্মবিল ও আশেপাশের গ্রাম গুলো। পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য বিমোহিত করছে ভ্রমন পিপাশুদের। পদ্মফুলে ভরে উঠেছে বিল।
গত কয়েক বছর আগে ফেইসবুকের কল্যানে নজরে আসে ঘাগুটিয়া ও কালিবাড়ি পদ্মবিল। স্থান দুটির অবস্থান ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার মনিঅন্ধ ইউনিয়নের অন্তর্গত ঘাগুটিয়া ও কর্মমঠ গ্রামে।
ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, সিলেট অঞ্চলে তখন বিতালং নামে একটি রাজ্য ছিলো, ঐ রাজ্যের রাজ কুমার ছিলেন সনাতন গোস্বামী। অধ্যাত্বিকতার টানে তিনি রাজ্য ছাড়েন। বহু এলাকা ঘুরে ৫৮৩ বঙ্গাব্দে তিন দিক থেকে বিল ঘেরা নোয়ামুড়ার টিলার একটি বটগাছের নিচে তিনি আসন পাতেন। বিলের পূর্ব পাশেই ছিলো হিন্দুদের সমৃদ্ধ গ্রাম দৌলতপুর যার পাশেই ঐতিহ্যময় পদ্ম বিল। নোয়ামুড়ার পাশে ছিলো হিন্দুদের আররেকটি সমৃদ্ধ গ্রাম জগন্নাথপুর।
রাজ কুমার সনাতন গোস্বামীর আগমনের খবর পেয়ে আশেপাশের প্রভাবশালী হিন্দুরা এখানে আশ্রম গড়ার উদ্যোগ নিলে তৎকালিন আগরতলার মহারাজ ঐ টিলার আশেপাশে কয়েকশ একর জায়গা দান করেন। পদ্ম বিলটি তারই অংশ বিশেষ।
প্রকৃতি প্রেমিরা যদি কম খরচে এবং সংক্ষীপ্ত সময়ের মধ্যে প্রকৃতির কাছাকাছি গিয়ে কিছুটা সময় কাটাতে চান তাহলে এটি হতে পারে অনন্য।
জনবসতি পূর্ণ গ্রামীন পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ ধরে যেতে হয় পদ্মবিলে। পাহারি জনপথ ভ্রমনও অনেকটা আনন্দের। নির্মল পরিবেশে শীতল হবে হৃদয়।
বিলে ফুটে থাকা অসংখ্য লাল পদ্মের স্পর্শ ভ্রমণকারীদের মূহর্তের মধ্যেই সকল ক্লান্তি ভুলিয়ে দিবে। বিশেষ করে বিলের দুইপাশে বাংলাদেশ ও ভারতের ছোট বড় পাহাড় মাঝখানে পদ্মবিল। নৌকায় করে ভেসে পদ্মবিলের সৌন্দর্য্য অভিভূত হবেন যে কেউ। মনের অজান্তেই হৃদয় থেকে চলে আসতে পারে দেশাত্মবোধক বা পল্লীগীতি অথবা কোন আধুনিক গান। হারিয়ে যেতে পারে অন্য ভূবনে।
কালিবাড়ী বিলে রয়েছে শতবর্ষী একটি বটগাছ, ক্লান্তি পেলে বটবৃক্ষের শিকড়ে বসে বিশ্রাম নিয়ে কাটাতে যায় কিছু সময়। পিকনিক করার জন্য রয়েছে বিস্তৃর্ন সবুজ মাঠ। বিলের পাশেই গোসাইস্থলে আছে শ্রী শ্রী সনাতন গোস্বামীর আশ্রম যেখানে বৈশাখের ১ তারিখে বসে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার সবচেয়ে বড় ও ঐতিহাসিক বৈশাখী মেলা।
পদ্মবিলের পাশে বিজিবি ক্যাম্প থাকায় নিরাপত্তা ব্যাবস্থাও বেশ ভাল। আসা যাওয়ার পথে মিনারকুট গ্রামের রাস্তার পাশেই পাওয়া যায় ‘শাপলা বিল’ নামে আরেকটি বিল। লাল শাপলার ফাঁকে ফাঁকে ফুটে আছে পদ্ম ফুল! আরো আছে আখাউড়ার ঐতিহ্যবাহী লিচু ও পেয়ারা বাগান। এখানকার নতুন অর্থকারি ফল মাল্টা বাগানও ঘুরতে পারেন যে কেউ।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহাগ আহমেদ বলেন, জন্মের পর থেকেই আমরা এই পদ্ম বিল দেখে এসেছি, গাগুটিয়া এবং কালিবাড়ী মূলত একটিই বিল। অতীতে এটি আট দশটি সাধারন বিল হিসেবে থাকলেও তিন বছর আগে ফেসবুকেরর একটি ট্রাভেলার্স গ্রুপের পোষ্টের মাধ্যমে এটি দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
বর্তমানে এখানে পর্যটকদের জন্য অস্থায়ী দোকান পাট এবং বিলে ঘুরার জন্য ভাড়ায় চালিত ছোট ছোট নৌকার মাধ্যমে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও রক্ষনাবেক্ষন পেলে এটি হয়ে উঠতে পারে ভ্রমন পিপাসুদের জন্য একটি আদর্শ স্থান।
যাতায়ত ব্যাবস্থাঃ বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে অাপনাকে ব্রহ্মণবাড়ীয়া জেলার আখাউড়া/গঙ্গাসাগর আসতে হবে। সেক্ষেত্রে ট্রেন হতে পারে একটি ভাল অপশন। যাবার জন্য সিএনজি/অটোরিক্সা আপডাউন রিজার্ভ নিলে ভাল হবে কারন ফিরতি পথে অনেক সময় গাড়ি পাওয়া যায়না। আসা যাওয়া মিলিয়ে সিএনজি ভাড়া নিতে পারে আখাউড়া থেকে ৫০০-৬০০ টাকা, গঙ্গাসাগর থেকে ৩০০-৪০০ টাকা।
তবে আপনি চাইলে কসবা থেকেও গোপিনাথপুর বাজার হয়ে পদ্ম বিলে যেতে পারেন।
খাওয়া দাওয়াঃ পর্যটকদের জন্য পদ্ম বিলটি নতুন আবিস্কৃত এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় সেখানে ভাল কোন খাবারের হোটেল এখনো গড়ে উঠেনি। আখাউড়া বা গঙ্গাসাগর বাজারে আপনার খাওয়া দাওয়া সেরে নেওয়া ভাল।
সতকর্তাঃ উপজেলা প্রশাসন ও বিজিবির পক্ষ থেকে ফুল ছেড়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আছে। স্থানীয় লোকজন অনেক অান্তরিক ও সহজ সরল প্রকৃতির, তবুও তাদের সাথে কোন প্রকার উগ্রতা প্রদর্শন করবেন না।
যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে পরিবেশ দূষন করা থেকে বিরত থাকুন।