সাখাওয়াত হোসেন, কসবা:
আখাউড়া-লাকসাম রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা রেলওয়ে স্টেশন এলাকা এবং সালদানদী রেলসেতু নির্মাণ কাজ বার বার বন্ধ হলেও আর বন্ধ হবে না। নির্মাণ কাজ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শেষ হবে। প্রায় আড়াই বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে আখাউড়া-লাকসাম রেলপথ নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরু হওয়ার সাত দিনের মাথায় শনিবার (১৮ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে কসবা রেলওয়ে স্টেশন এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথাগুলি বলেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের শূন্য রেখার ১৫০ গজের ভেতর কাজ হচ্ছে, এমন অজুহাতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বাধার মুখে ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে কসবা রেলস্টেশন ও সালদা রেলসেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ১২ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের আওতাধীন কসবা রেলস্টেশন, রেলপথ ও সালদা রেলসেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আরো বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সমস্যাগুলি সমাধান করে রেলওয়ে স্টেশন ও সালদা রেল সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। গত সাত দিন ধরে পুরোদমে কাজ চলছে। তিনি বলেন, নির্মাণ কাজ শেষ হলে বাংলাদেশের জন্য যেমন ভাল হবে, তেমনি ভারতেরও। তিনি বলেন, পাশা-পাশি বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের সাথে আমাদের যে যোগাযোগ আছে এর ফলে তা আরো গুরুপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কাজেই এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ থাকা কসবা সীমান্ত হাট চালুর বিষয়ে সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে পররাস্ট্র মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বর্ডার হাটগুলো হলো ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের সাধারণ মানুষের সম্পৃতির মেলবন্ধন। এ ব্যাপারে খুব শীঘ্রই ভারতীয় হাইকমিশনারের সাথে আলাপ আলোচনা করে কসবা সীমান্ত হাটসহ সব কয়টি হাট শীঘ্রই খুলে দেওয়া হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, পররাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইন্সপেক্টর জেনারেল অব মিশন আসাদ আলম সিয়াম, পররাস্ট্র মন্ত্রালয়ের মহাপরিচালক (সাউথ এশিয়া) রকিবুল হক, টেক্স কমিশনার মাসুদ কামাল, পররাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, জুবায়েদ হোসেন, বিজিবির কুমিল্লা সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল মো. আবুল কালাম শামসুদ্দিন রানা, ৬০ বিজিবির অধিনায়ক (সিও) লে. কর্ণেল মুহাম্মদ আশিক হাসান উল্লাহ, প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন, কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আমিমুল এহসান খানসহ প্রশাসন ও বিজিবি’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলজংশন থেকে লাকসাম রেলজংশন পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডাবল লাইনের কাজ চলছে। ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর মধ্যে প্রকল্পের বেশির ভাগ কাজ সম্পন্ন হলেও বিএসএফের বাধার মুখে কসবা রেলস্টেশন, স্টেশনের ডাবল লাইন ও সালদা রেলসেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ হয়েছিল।
উল্লেখ্য ৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ আখাউড়া-লাকসাম রেলওয়ে প্রকল্পটি জাতীয় পর্যায়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। গত বছরের জুলাই মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সীমান্ত সম্মেলনে প্রকল্পটির বন্ধ হয়ে থাকা ওই অংশের নির্মাণকাজ পুনরায় চালুর বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করা হয়েছিল। পরে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে প্রকল্পটি চালুর বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। এর ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের পয়লা মার্চ বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান সরেজমিনে আখাউড়া-লাকসাম রেলপথের কসবা রেলস্টেশন এলাকা পরিদর্শন করেন। ওই সময় তিনি প্রকল্পটির বন্ধ থাকা কাজ দ্রæত শুরু হবে বলে দৃঢ় আশা ব্যক্ত করেছিলেন। গত ১২ মার্চ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সরাইল রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম নির্মাণকাজ পরিদর্শন করে প্রকল্পের কাজ পুনরায় শুরু করেন।
আখাউড়া-লাকসাম রেলপথ নির্মাণকাজ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন বলেন, পুরো প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শেষ হলে জাতীয় অর্থনীতিতে তিনগুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ২৩ জোড়া ট্রেন চালু আছে। নির্মাণকাজ শেষ হলে এই পথে ৭২ জোড়া ট্রেন চলাচল করতে পারবে।