এমদাদুল হক সোহাগ:
কুমিল্লা নগরীতে চলছে তীব্র গ্যাস সঙ্কট। ভোর থেকেই উধাও হয়ে যাচ্ছে গ্যাস। সকাল গিয়ে দুপুর এবং বিকেল পেরিয়ে রাত হলেও পাওয়া যাচ্ছেনা কাঙ্খিত গ্যাস। বারবার চুলার সুইচ অন করেও বিমুখ হতে হচ্ছে গৃহিনীদের। বর্তমানে জনজীবন ব্যহত হয়ে দুর্ভোগের কারন হয়ে দারিয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকেই তীব্র আকার ধারণ করে গ্যাস সঙ্কট। এতে করে অসহায় হয়ে পরেছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। সঙ্কটের কারনে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যহত হচ্ছে।
জানা যায়, কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও, রেইসকোর্স, নতুন চৌধুরীপাড়া, হাউজিং, অশোকতলা, রাণীর বাজার, ঠাকুরপাড়া, চাঁনপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় ভোর সকাল থেকেই চাপ কমতে শুরু করে গ্যাসের। বেলা হওয়ার সাথে সাথেই আর পাওয়া যায়না গ্যাস। দিন পেরিয়ে রাত নয়টা দশটায়ও থাকেনা গ্যাস। নগরীর হাউজিং স্টেট এলাকার বাসিন্দা শামসুল আলম জানান, গত বছরের নভেম্বর ডিসেম্বর থেকেই গ্যাস ডিস্টার্ব দেয়া শুরু হয়েছে। এখনতো থাকেই না। বৈদ্যুতিক চূলা ব্যবহার করে কোনভাবে খাবার রান্না করে চলতে হচ্ছে। এতে করে নতুন চুলা কেনা ও বিদ্যুত বিল বাড়াতে আমার বাড়তি খরচ বহন করতে হচ্ছে। তাছাড়া গ্যাস বিল ঠিকই দিতে হচ্ছে। বাসায় ছোট ছোট বাচ্চা তাদের জন্য খাবার তৈরিতেও বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে।
শহরতলীর চাঁনপুর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী রুহুল কুদ্দুস সুজাত বলেন, সকাল থেকেই তাঁর এলাকায় গ্যাস থাকেনা। বাসা বাড়িতে চলতে অনেক কষ্ট হচ্ছে তাদের।
পশ্চিম বাগিচাগাঁও এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, শীত এলেই গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়। প্রতি বছরই এমন হচ্ছে অথচ সমাধান করতে ব্যর্থ হচ্ছে বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানী। বাসার জন্য আলাদা সিলিন্ডার গ্যাসের বোতল ও চুলা কিনতে হচ্ছে। অল্প টাকা বেতন দিয়ে সংসার চালাতে এমনিতেই কষ্ট হয়, তার উপর বাড়তি খরচ এ যেন, মরার উপর খাঁড়ার ঘা।
বাগিচাগাঁও এলাকার কমিশনার গলির বাসিন্দা মিসেস ফাহমিদা আক্তার জিনিয়া। চাকরি করেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গ্যাসের চুলায় রান্না করার জন্য কাঁক ডাকা ভোরে উঠেন। কখনো রান্না করতে পারেন আবার কখনো রান্নার মাঝখানে চলে যায় গ্যাস, দুদিন আগে ডিম ভাজতে গিয়ে ডিম ভেঙ্গে চুলায় দিতে দিতেই চলে যায় গ্যাস। রাত দশটায় বা তারর পরেও আসে গ্যাস। গ্যাসের সমস্যার কারনে তাকে কিনতে হয়েছে রাইস কুকার, কেটলি। চা খেতে হলে ইলেকট্রিক কেটলিতে পানি ফুটাতে হয়। মাস শেষে গুণতে হয় বাড়তি বিদ্যুত বিল। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যহত হচ্ছে। প্রভাব পরছে পেশা জীবনেও ।
নগরীর রেইসকোর্স এলাকার বাসিন্দা শাহরিয়ার কবির রিয়াদ জানান, সকাল হলেই ওই এলাকায় গ্যাস নিভু নিভু করে। এটা নিয়ম হয়ে দারিয়েছে। দুর্ভেোগ দেখার কেউ নেই। তবে কুমিল্লা নগরীর কিছু এলাকায় আবার গ্যাসের সমস্যা তেমন নাই বলেও জানা গেছে।
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর জনসংযোগ কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন মুঠোফোনে জানান, শীতকালে এমনিতে গ্যাস জমে গিয়ে সমস্যার সৃষ্টি করে। যার কারনে গ্যাসের প্রেসার থাকেনা। বিভিন্ন এলাকার গ্যাস লাইনে সরবরাহের তুলনায় গ্রাহক প্রচুর বেড়ে যাওয়ায় গ্যাস সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ওইসব এলাকায় গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন সংস্কার করতে হবে। গ্যাসের সরবরাহে ঘাটতি আছে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন এ বিষয়ে আমি ভালো বলতে পারবোনা। এ বিষয়ে আপনি জিএম ইঞ্জিনিয়ার সেকশনে যোগাযোগ করতে পারেন।
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি: এর ইঞিনিয়ারিং সার্ভিসের জি.এম (চলতি দায়িত্ব) মোর্তজা রহমান খান জানান, ন্যাশনাল গ্রিড থেকে আমরা কিছুটা কম গ্যাস পাচ্ছি। সরবরাহ কমের পাশাপাশি শীত তীব্র আকার ধারণ করায় গ্যাসের সঙ্কট কিছু কিছু এলাকায় তীব্র আকার ধারণ করেছে। কয়েক দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, আমরা আগে যে পরিমান গ্যাস জাতীয় গ্রিড থেকে পেতাম সে পরিমান গ্যাস এখনো পাচ্ছি। শীতে গ্রাহকেরা অন্যসময়ের তুলনায় বেশী গ্যাস ব্যবহার করেন। বাড়তি চাহিদার গ্যাসটা এতদিন আমার পাইনি বলেই সমস্যা বেমী হয়েছে। সেটি দ্রুত সমাধান হবে।
এদিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত পোনে নয়টা পর্যন্ত গ্যাসের দেখা মিলেনি বাগিচাগাঁও এলাকায়।