এমদাদুল হক সোহাগ, কুমিল্লা
কুমিল্লায় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নিলামের ১০ ভবনের টেন্ডার একাই নিজ নামে করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে যুবদল নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ওই নেতা বুড়িচং উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেন।
এছাড়া কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনগুলি ও মালামালসহ নামমাত্র মূল্যে নিলামে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। এ ঘটনায় উপজেলা ও জেলা জুরে শুরু হয়েছে সমালোচনা।
জানা যায়, কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় নতুন ভবনের নির্মাণের উদ্দেশ্যে বিদ্যমান দশটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন পাকা ভবন, টিন শেড ভবন, বাউন্ডারি ওয়াল এবং ওয়াশরুমের নিলামের আয়োজন করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফওজিয়া আক্তার।
গত ১৪ অক্টোবর নিলামের চিঠি ইস্যু করেন তিনি। কিন্তু অদৃশ্য কারণে নিলামের ওই বিজ্ঞপ্তিটি কোন গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, কিংবা দাপ্তরিকভাবে প্রচার করেনি। এছাড়াও জনসাধারণের অবগতির জন্য মাইকিং করা হয়নি । বিজ্ঞপ্তি দেয়ার একদিন পর তড়িঘড়ি করে ১৬ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নামমাত্র ঠিকাদারদের উপস্থিতিতে নিলাম সম্পন্ন করা হয়। অনুষ্ঠিত ওই নিলামে প্রাক্কলিত মূল্যের ২০০ থেকে ৫০০ টাকা বাড়তি দামে সবগুলি নিলাম বুড়িচং উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেনকে দিয়ে দেয়া হয়। তাছাড়া মূল্য নির্ধারনেও করা হয়েছে দুর্নীতি। প্রকৃত মূল্য না দেখিয়ে ঠিকারদারকে অনৈতিক সুবিধা দয়োর জন্য প্রকৌশলী ওই কাজ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে ওই নিলামে অংশগ্রহণ করতে আসা কিছু সংখ্যক ঠিকাদারকে উপজেলায় প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে।
বুড়িচং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি সোহেল আহমেদ বলেন, কাউকে কিছু না জানিয়ে গোপনে নিলামের মাধ্যমে সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেনকে কাজ দেয়া হয়েছে, যা পুরু বেআইনি। আমরা চাই সকলের মাঝে এ কাজ বন্টন করা হোক।
তারেক জামান নামে আরেকজন ঠিকাদার বলেন, তারা কয়েকজন নিলামে অংশগ্রহণ করার জন্য উপজেলা গেইটে এসেছিলেন। সেখানে তাদেরকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়েছে, তারা উপজেলায় প্রবেশ করতে না পেরে ফিরে যান। এদিকে সরেজমিনের শংকুচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, ১৫০ ফুট লম্বায় প্রায় ২৫ ফুট প্রস্থ, চারদিকে দেয়াল উপরে টিনের ছাউনি দেয়া একটি ভবন ও ঠিক তার পাশেই ১২০ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট প্রস্থে ছাদ পেটানো একটি ভবন নিলামের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।
এই দুটি ভবনের নিলামের প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৩০১ টাকা। নিলামে এই ভবনটি বিক্রি করা হয় ২৩ হাজার ৭০০ টাকায়। অথচ ২০০৬ সালের শেষের দিকে এই ভবনগুলো কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল।
এছাড়াও সাদকপুর নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬ হাজার ৩৩৩ টাকা, দক্ষিণ বুড়িচং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫ হাজার ২৬ টাকা, শিকারপুর নেয়ামত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২ হাজার ২৪২ টাকা, পাঁচোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬ হাজার ৪০৫ টাকা, শোভারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ হাজার ১০৮ টাকা, যদুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৬ হাজার ২৫৭ টাকা, উত্তর জরইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ হাজার ১২ টাকা, শিমাইলখারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৬ হাজার ৬৮৮ টাকা। কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ভবনগুলি নামমাত্র মূল্যে নিলামে বিক্রি করে দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
শংকুচাইল কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, এ ধরনের দাম ঠিক হয়নি, যারা বুদ্ধিহীন তারাও বুঝবে দুটি ভবনের দাম ২৩ হাজার ১ শত টাকা নয়। শুধুমাত্র একটি ভবনের ছাদের রড গুলো দেড় লক্ষ টাকার উপরে বিক্রি করা যাবে। এ কাজগুলি যারা করেছেন তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।
বুড়িচং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফওজিয়া আক্তার জানান, ভবন গুলির মূল্য নির্ধারণ করা হয় উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের মাধ্যমে, তারা বলতে পারবেন কিভাবে দাম নির্ধারণ করেছেন। পত্রিকা কিংবা মাইকিং করার কোন নির্দেশ ছিল না, তাই করা হয়নি।
বুড়িচং উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সায়ীদ জানান, বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী ভবনগুলোর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। নিলামের বিষয়ে শিক্ষা অফিস প্রচার-প্রচারণা কিংবা বাকি কার্যক্রম করার কথা।
অভিযুক্ত বুড়িচং উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেন বলেন, শত মানুষের মাঝে ওপেন টেন্ডার হয়েছে। কাউকে বাধা দেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। এছাড়া আমাদের দল এখন ক্ষমতায় নেই, আমরা কিভাবে প্রভাব বিস্তার করবো। এসব অভিযোগ সঠিক নয়।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি আনোয়ারুল হক জানান, দলের পদ-পদবী দেয়া হয়েছে মানবতার সেবা করার জন্য। কোন প্রকার টেন্ডারবাজি চাঁদাবাজির সাথে যদি কেউ জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধে দল থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সোনিয়া হক বলেন, এ বিষয়ে আমি কোন বক্তব্য দিতে রাজি না। আপনি আমার কর্তৃপক্ষের (ডিসির) সাথে কথা বলতে পারেন। আমি মূলত এসিল্যান্ড। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্বে আছি।