মন্তব্য প্রতিবেদন:
গত ১লা জুলাই গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এক ভার্চুয়াল মিটিং এ বলেছেন, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো রকমের বয়সের সীমাবদ্ধতা রাখা হবে না। অনেক ব্যক্তির হয়তো প্রয়োজনীয় কারিগরী দক্ষতা আছে কিন্তু তার প্রাতিষ্ঠানিক কোনো সার্টিফিকেট নাই এবং সার্টিফিকেট না থাকার কারণে ভালো চাকরি পাচ্ছে না। অথবা চাকরি পেলেও ভালো বেতন পাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে সে ব্যক্তি যদি চায় এবং যদি তার প্রয়োজনীয় অ্যাকাডেমিক যোগ্যতা থাকে তাহলে সে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হতে পারবে।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে তা কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য আত্মঘাতী হবে। বর্তমান সরকারের রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের জন্য কারিগরি শিক্ষার হার বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই, কিন্তু ডিপ্লোমা পর্যায়ের মতন চলমান শিক্ষা ব্যবস্থায় বয়সসীমা শিথিল করে দেয়ার মতন সিদ্ধান্ত কখনই সুফল বয়ে আনবেনা। বর্তমান সরকার কারিগরি শিক্ষার প্রসার বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করলেও বর্তমান প্রজন্মের অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এখনও এই শিক্ষাব্যবস্থাকে হেয় করছে, কটুক্তি করেছে। এমনকি কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকেই এই শিক্ষাব্যবস্থায় অধ্যয়নের জন্য অন্যদের উৎসাহিত করছে না। গত কয়েকবছর ধরে তরুণ প্রজন্মের মাঝে ডিপ্লোমা পর্যায়ে অধ্যয়নের আকাঙ্খা বাড়ছে। একটা সময় অনিয়মিত শিক্ষার্থীরাই ডিপ্লোমা পর্যায়ে পড়তো। কালের পরিক্রমায় এই ধারার পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে
বাংলাদেশের প্রায় ৪৯ টি সরকারি এবং প্রায় পাঁচ শতাধিক বেসরকারি পলিটেকনিকে অধ্যয়নরত প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর অধিকাংশই নিয়মিত, যা গত কয়েক বছর ধরে আশানুরূপ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেসব অভিভাবক তাঁর সন্তানদের কারিগরি শিক্ষায় অধ্যয়ন করাতে চাইতেন না কিংবা কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা ছিলো, তাঁদের মধ্যে অনেকেই এখন এই শিক্ষাব্যবস্থায় ভরসা রাখছেন।
কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থার ডিপ্লোমা পর্যায়ে নিয়মিত শিক্ষার্থী বৃদ্ধির এই সুসময়ে সরকারের এই সিদ্ধান্ত কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থার পূর্বের অবস্থায় নিয়ে যাবে। কারিগরি দক্ষতা সম্পন্ন সনদবিহীন জনবলকে সনদায়নের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। বর্তমানে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্ট প্রোগ্রামের (সেইপ) মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৩ মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। ৩ মাস পর সফল ভাবে প্রশিক্ষণ সম্পন্নকৃত প্রশিক্ষণার্থীদের সেইপ কর্তৃক সনদপত্র প্রদান করা হচ্ছে।
এ ধরণের স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্সের মাধ্যমে কারিগরি দক্ষতা সম্পন্ন সনদবিহীন জনবলকে আরো প্রশিক্ষিত করে সনদপত্র বিতরণের মাধ্যমে প্রত্যয়িত (সার্টিফাইড) দক্ষ জনবল তৈরী করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। এছাড়াও সরকার উদ্যেগ নিলে ১২ মাস বা ১৬ মাস মেয়াদী প্রফেশনাল কোর্স চালু করতে পারে, যেগুলোর বয়সসীমা শিথিল থাকবে। এতে করে একদিকে যেমন কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন জনবলকে দ্রুত কর্মক্ষেত্রের জন্য উপযোগী করে তোলা যাবে, অন্যদিকে নিয়মিত শিক্ষার্থীরা কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করে দেশের অগ্রযাত্রায় আত্ননিয়োগ করতে পারবে।
বয়সসীমা শিথিলের এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বাতিল করে কারিগরি দক্ষতা সম্পন্ন জনবলকে সনদায়নের জন্য সরকারের ভিন্ন পন্থা অবলম্বনই হবে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য সময়োপোযোগী সিদ্ধান্ত।