এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ষাটোর্ধ বৃদ্ধ মতি ভুইয়ার মৃত্যু নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে রহস্যের। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিপক্ষকে মামলায় ফাঁসাতে মাদকাসক্ত ছেলে রুবেল মিয়া নিজেই তার বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করে। ঘটনার পর ওই পক্ষের লোকজন বাড়ি ছাড়ার সুযোগে বাড়িঘরে চালানো হয় ব্যাপক ভাঙচুর-লুটপাট। রহস্যঘেরা ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা এলাকার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে জেলার বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা মতি ভূইয়ার (৬২) মৃত্যু হয়। তার পরিবারের অভিযোগ, প্রতিবেশী জামির হোসেন ও রহিম মিয়ার সাথে পূর্ববিরোধের জেরে তারা মতিকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। অপরদিকে আনীত এই অভিযোগ মিথ্যা দাবী করে পাল্টা অভিযোগ করে জামির ও রহিম বলেন, মতির মাদকাসক্ত ছেলে রুবেলই তাকে মেরেছেন।
বৃদ্ধ মতি ভুইয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পরদিন ২৪ সেপ্টেম্বর তার অপর ছেলে মো. রাকিব বাদী হয়ে জামির ও রহিমসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর আসামী পক্ষের লোকজন পুলিশী গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। এ সুযোগে রহিমের বাড়ির দুইটি ঘর এবং জামিরের একটি ঘরে হামলা করে চালানো হয় ব্যাপক ভাঙচুর-লুটপাট। রুবেলের নেতৃত্বে তার লোকজন এহেন ঘটনা ঘটিয়েছে উল্লেখ করে রহিমের স্ত্রী লিপি আক্তার এবং জামির মিয়া জানান, তাদের ঘর থেকে সবকিছু লুট করে নেয়া হয়েছে। ফ্রিজ, টিভি, ঘরের আসবাবপত্র, এমনকি দলিলপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র পর্যন্ত তারা লুট করে নিয়ে গেছে। সবমিলিয়ে অন্তত ২০/২৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নেয়া হয় বলে তারা অভিযোগ করেন। তারা আরো জানান, রুবেলের মাদক সেবন ও কারবারে বাঁধা দেওয়ার কারণে প্রায়ই সে তার বাবাকে খুন করে রহিম ও জামিরকে ফাঁসানোর হুমকি দিতেন। এ নিয়ে মতি ভুইয়ার মৃত্যুর কয়েকদিন আগে জামির বিজয়নগর থানায় অভিযোগও দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিহত মতি ভুইয়ার কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, রুবেল দীর্ঘদিন ধরেই মাদকাসক্ত। এ নিয়ে তার বাবার সাথে প্রায়ই ঝগড়া হতো। ইতোপূর্বে রুবেল তার বাবার গায়েও হাত তুলেছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে রুবেলই মাদক সংক্রান্ত বিষয়ে বাকবিতণ্ডার জেরে তার বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তবে রুবেল মিয়া বলেন, বাড়ির জায়গা নিয়ে রহিম ও জামিরের সাথে আমাদের বিরোধ রয়েছে। এর জের ধরেই ওইদিন হঠাৎ করে রহিমের ছেলে রিফাতসহ ১২/১৪ জন এসে আমার বাবাকে পিটিয়ে মারে। আসামি পক্ষের বাড়িঘর ভাঙচুর-লুটপাটের অভিযোগ মিথ্যা।
বিজয়নগর থানার পরিদর্শক (ওসি) মো. আতিকুর রহমান বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘বাড়ির সীমানা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে মামলা চলমান আছে। এর জের ধরেই হত্যকাণ্ড ঘটেছে কি না সেটি আমরা তদন্ত করে দেখছি।’