করোনা বা কোভিড ১৯! গত প্রায় এক বছর যাবত এ শব্দগুলো শোনা মাত্রই সবার মনে হয় যেন মৃত্যু আমাদের তাড়া করছে। হার্টবিট দ্বিগুন হয়ে যায়। এই যেন দম বন্ধ হয়ে যাবে এখনই। চারদিকে আতঙ্ক, মাঝে মাঝে মনে হয় যেন আমরা এক মৃত্যপুরীতে বাস করছি। দিন যত যাচ্ছে বন্ধুবান্ধব আতিœয়স্বজন হারিয়ে হচ্ছে। দিন দিন সামাজিক বন্ধনগুলো আমরা ভুলে যাচ্ছি। তারই মাঝে খুশির বার্তা নিয়ে এসেছে ফাইজার এবং মডার্না। এফডিএ’র অনুমতি নিয়ে বাজারজাত করে তাদের করোনা ভাইরাস প্রতিষেধক।
সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১৫ ডিসেম্বর সোমবার থেকে নিউ ইয়র্কে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়েছে। প্রথমে ফ্রন্ট লাইন ফাইটার চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। আমি একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে করোনাকালে ভয়কে অগ্রাহ্য করে আমরা মানুষের সেবা দিয়ে গিয়েছি। গত ২১ ডিসেম্বর নিউ ইয়র্কের লিংকন হাসপাতালে গিয়ে এ ভ্যাকসিন নেয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার।
করোনার এই প্রতিষেধকটি নতুন হওয়ায় এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় অনেকেই তা নিতে অনাাগ্রহ প্রকাশ করছেন।
ভ্যাকসিন নেয়ার পর থেকেই শুভাকাঙ্খীরা আমাকে ফোন করে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানতে চাইছেন। আমি যখন ভ্যাকসিনটি নিতে হাসপাতালে যাই, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরপরই আমাকে ভ্যাকসিনটি দেয়া হয়। যাদের কোন ধরনের এলার্জি আছে তাদেরকে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বাছাই করে টিকাটি দেয়া হচ্ছে। টিকা নেয়ার পর ১৫ মিনিট নিবিড় পর্যবেক্ষনে রাখা হয়। কোন ধরনের পাশর্^ প্রতিক্রিয়া দেখা না গেলে, তাদের বাড়ী যেতে দেয়া হয়।
আমি এখন পর্যন্ত সম্প‚র্ণ সুস্থ্য আছি। কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ফ্লুসহ সকল টিকা’তেই দেখা যায়, যা আমারও হয়েছে, যা অতিসয় সামান্য। পর্যায়ক্রমে সুযোগ পেলে সকলেরই এই ভ্যাকসিন নেয়া উচিত।
কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে ফাইজার ও মডার্নার ভ্যাকসিনটি প্রায় ৯৫% সুরক্ষা দেয় এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) ছাড়পত্র পেয়েছে। জেনারেল পেরনা সাংবাদিকদের আরো বলেছেন , তিনি শতভাগ নিশ্চিত যে কোভিডের মতো শত্রæকে পরাজয়ে প্রয়োজনীয় এই ডোজগুলো সুরক্ষিতভাবে পরিবহন করা হচ্ছে।
গত মার্চ মাস থেকে আমরা নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের মাঝে করোনার ঝুঁকি কমাতে নানা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে তিন শতাধিক বাংলাদেশী প্রবাসীদের হারিয়েছি।অসুস্থ হয়ে বহুজন হাসপাতালে বা বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। ভয়াবহ মহামারীর ২য় ঢেউয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে কোন ভয়-সংকা না রেখে ভ্যাকসিন গ্রহণ করা জরুরী। সেইসাথে সিডিসি’র নিয়ম মেনে চললে বাঙালী কমিউনিটি আরো উপকৃত হবে।
প্রসঙ্গত, ফাইজারের ভ্যাকসিন এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য, কানাডা, বাহরাইন এবং সৌদি আরবের অনুমোদন পেয়েছে। অগ্রাধিকারের তালিকার বাইরে থাকা আমেরিকানরা জানুয়ারিতে ভ্যাকসিন পাবেন বলে ধারণা দেয়া হয়েছে। সম্ভবত এপ্রিল থেকে স্বাভাবিকভাবেই ভ্যাকসিন ২টি সকলের আওতায় আসবে।
খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন-এফডিএ’র প্রধান স্টিফেন হান জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্ব জুড়ে যে মহামারি এতো পরিবারকে আক্রান্ত করেছে তার বিরুদ্ধে লড়তে এই ভ্যাকসিনের অনুমোদন নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
লেখক : নিউইয়র্কের কিংস কাউন্টি হসপিটালে নিউরোসার্জারী ফিজিশিয়ান এসিসটেন্ট, সম্পাদক-খবর ডট কম, এবং কোষাধ্যক্ষ-আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাব।