বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য স্থানান্তরে অস্বীকৃতি কুবি প্রশাসনের

কাতিব হাসান মুরাদ, কুবি:

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রশাসনিক ভবনের সামনে ২০১৭ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল বাঙ্গালী জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য। ভাস্কর্যটিতে ব্যবহৃত নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ও সংকীর্ণ জায়গা নিয়ে বারবার সমালোচনা হলেও স্থায়ী কোনো সমাধান দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বর্তমানে প্রায় বেশিরভাগ অংশেই ফাটল ও রং খসে পড়ায় জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য। মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ভাস্কর্যে নতুন করে রঙ লাগানোর কাজ শুরু করলেও উপযুক্ত স্থানে স্থানান্তর করার ব্যাপারে ভাবছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গতবছরের ১৬ ই ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণের পর এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. শামিমুল ইসলাম ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল ইসলাম মাজেদ তাদের বক্তব্যে এই ভাস্কর্য বিকৃতভাবে ও সংকীর্ণ জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে জানিয়ে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছিলেন। এসময় তারা বলেন, এই ভাস্কর্য নির্মাণে চরম দুর্নীতি হয়েছে ও নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও উপযুক্ত জায়গায় এটি নির্মাণ করা হয়নি। বক্তব্যের শেষে উভয়েই ভাস্কর্য এখান থেকে সরিয়ে একটি উপযুক্ত জায়গায় নির্মাণের দাবি জানিয়েছিলেন।

জানা যায়, ২০১৭ সালে প্রকৌশল শাখার তত্ত্বাবধানে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে শিল্পী মৃণাল হকের মাধ্যমে এ ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়। ১৫ ফুট উচ্চতা থাকার কথা থাকলেও হয়েছে মাত্র ১১ ফুট। অল্প জায়গায় ছোট একটি বেদি নির্মাণ করে সেখানেই স্থাপন করা হয় ভাস্কর্যটি। নির্মাণের ৫ মাসের মাথায় ভাস্কর্যে ফাটল, প্রকৃত নকশা অনুসরণ না করা, ভাস্কর্যে বঙ্গবন্ধুকে ক্ষুদ্রাকৃতি এবং বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলে। এটি এখান থেকে স্থানান্তর করে খোলামেলা জায়গায়, উপযুক্ত স্থানে দৃষ্টিনন্দন ও নকশা অনুসরণ করে বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত অবয়ব সমৃদ্ধ ভাস্কর্য স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, শাখা ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এর আগে ২০১৯ সালের ২৩ মে ভাস্কর্যটি পরিবর্তনের জন্য মানববন্ধনও করেছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একবার বিকৃত ভাস্কর্য সরিয়ে নতুন ভাবে আরেকটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছিল। তবুও কাঙ্ক্ষিত ভাস্কর্য পায়নি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার।

বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের সংস্কার কাজ করছেন আকাশ আহমেদ ও চারু পিন্টু। চারু পিন্টু এ ব্যাপারে বলেন,  আমরা আগামী রবিবার পর্যন্ত ভাস্কর্যের শুধু রংয়ের কাজটা করবো। রংয়ের কাজটা হলে আগামী ৭-৮ বছর ভালো থাকবে এই ভাস্কর্যটি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোঃ আবু তাহের বলেন, ‘আমি আগেই বলেছিলাম দায়সারাভাবে, ত্রুটিপূর্ণ ভাবে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখন একটা নতুন জায়গায় ভাস্কর্য নির্মাণে যে বাজেটের প্রয়োজন সে বাজেট আমাদের কাছে নাই, তাই আমরা যেটি আছে সেটিই সংস্কারের দিকে যাচ্ছি।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য মেরামত কমিটির আহবায়ক ড. এ. কে. এম. রায়হান উদ্দিন বলেন, ‘ভাস্কর্য স্থানান্তরের দাবির সাথে আমাদের একাত্মতা রয়েছে এবং আমরা সুপারিশও করেছিলাম। কিন্তু এটি স্থানান্তর করে নতুন ভাস্কর্য করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। তাই স্থানান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন আমরা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরন করে এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ভাস্কর্য সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।’

ভাষ্কর্যের ব্যপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘ভাস্কর্যটি পুরোটাই অনিয়মের মাধ্যমে করা হয়েছে। সঠিকভাবে ও ভালমানের নির্মাণ সামগ্রী ছিলো না। এখন আমরা চেষ্টা করছি ভাস্কর্যটি দৃষ্টিনন্দন করার। এ নিয়ে আমি কমিটি করে দিয়েছি। কমিটি বাকি কাজ করবে।’

Post Under