মাদ্রাসায় বলাৎকার: ছেলে নিয়ে জেলা ছাড়লেন বাবা

কুমিল্লায় একটি কওমি মাদ্রাসায় বলাৎকারের অভিযোগ উঠার পর প্রতিষ্ঠানটিতে ভুক্তভোগী ছেলেকে না পড়িয়ে নিয়ে এসেছেন বাবা। কেবল মাদ্রাসা নয়, ছেলেকে নিয়ে জেলা ছেড়ে চলে গেছেন ওই বাবা। ছেলেটির বাবা অভিযোগ করার পর গত ১৪ নভেম্বর জেলার দেবীদ্বার উপজেলার নিউমার্কেট এলাকার জামিয়া ইসলামিয়া বাইতুল নূর মাদ্রাসারি শিক্ষক ও ক্বারি মো. শাহজালাল মাঝিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সে সময় ছেলেটির বাবা গণমাধ্যমকে জানান, ‘কোরআন শরিফ দিয়ে চালান দিয়ে পাগল করে’ দেয়ার ভয় দেখিয়ে তার ছেলেকে বলাৎকার করা হয়েছে। ঘটনার তিন মাস আগে ১৩ বছর বয়সী শিশুটিকে মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়। সে হাফেজিয়াতে পড়ত।

করোনা সংক্রমণের কারণে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকলেও মাদ্রাসায় ক্লাস চলত। ছেলেটির বাবা জানান, বাড়ি ফিরে আসার পর তার ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন বাবাকে সব খুলে বলে সে। আর তিনি সরাসরি থানায় যান। দেবিদ্বার থানায় ছেলেটির বাবার মামলার উল্লেখ করা হয়, শিক্ষক শাহজালাল প্রায়ই তাকে যৌন নিপীড়নের চেষ্টা করতেন। ঘটনার দিন ওই শিশুকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলৎকার করেন।

মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে দেবিদ্বার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে জানান, সন্দেহভাজক শিক্ষক এখনও আটক আছেন। বিশেষ জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মাহবুব হোসেন খানের আদালতে শিশুটি ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। পাশাপাশি তার ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। আসামি শাহজালাল ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে এখনও আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি।

মাদ্রাসার প্রধান মাওলানা আবু সাঈদ সোহেল জানান, ‘আমরা বলছিলাম অভিযোগ যদি সত্য হয়, তাইলে ওই শিক্ষককে আমরা বরখাস্ত করমু। পুলিশ তারে নিয়া গেছে, আর আদালতে সে স্বীকারোক্তি দিছে। এর পরেই আমরা তারে মাদ্রাসা থাইক্যা বহিষ্কার করছি।’ ছেলেটি এখন কোথায়-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের মাদ্রাসা থাইক্যা তারা ছেলেরে অন্যত্র নিয়া গেছে। কই গেছে এইডা আমি জানি না।’

পরিবারটি দেবিদ্বার পৌর এলাকায় একটি বাসায় ভাড়া থাকত। সেখানে তারা যায় বছর তিনেক আগে। ছেলেটির বাবা বাস চালাতেন। যে বাসায় তারা ভাড়া থাকতেন, সেখানে গিয়ে তাদেরকে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশী এক নারী বলেন, ‘তারা এনে (এখানে) থাকত। মাদ্রাসার ভিতরে পোলারে আকাম করণের কারণে পরে তারা শরমে এন (এখান) থাইক্যা যাইগ্যা (চলে গেছে)। আমরারে কিচছু কইয়া যায় নাই।’ ওই নারী যখন কথা বলছিলেন, তখন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক প্রবীণ বলেন, ‘এই আকামের কারণে মাদ্রাসাত অহন পুলাপান পড়াইতাম মন চায় না।’

Post Under