বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। একজন মারা গেছেন।
আর ৫ আসামি এখনও বিদেশে পালিয়ে আছেন।
পালিয়ে থাকা ৫ আসামি হলেন- খন্দকার আবদুর রশিদ, এম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী ও রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন খান। এদের মধ্যে শুধু এম রাশেদ চৌধুরী ও এসএইচএমবি নূর চৌধুরীর অবস্থান শনাক্ত করতে পেরেছে সরকার। বাকি ৩ জনের অবস্থান জানা নেই।
বিদেশে পালিয়ে থাকা খুনীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন এম রাশেদ চৌধুরী। তাকে ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে বেশ কয়েকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে আলোচনাকালে একাধিকবার তাকে দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। অবশেষে চলতি বছর ১৭ জুন খুনী এম রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের সব নথি তলব করেছেন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার। এম রাশেদ চৌধুরীর নথি তলবের পর এখন যুক্তরাষ্ট্রে তার রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল হতে পারে। ফলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে।
এসএইচএমবি নূর চৌধুরী পালিয়ে রয়েছেন কানাডায়। ১৯৯৬ সালে খুনী নূর চৌধুরী ও তার স্ত্রী কানাডায় যান ভিজিট ভিসায়। সেখানে গিয়ে তারা শরণার্থী হিসেবে কানাডা সরকারের কাছে আবেদন করেন। তখন থেকেই তারা কানাডায় অবস্থান করছেন। নূর চৌধুরীকে ফেরত দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে কানাডা সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের ১১ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডা সফর করেন। সে সময় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা নূর চৌধুরীকে ফেরত দেওয়ার অনুরোধও করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন জানিয়েছিলেন, খুনী নূর চৌধুরীকে ফেরত পেতে কানাডার আদালতে লড়বে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর কানাডার ফেডারেল আদালত খুনী নূর চৌধুরীর অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশের পক্ষে রায় দেয়। সে অনুযায়ী নূর চৌধুরীর বিষয়ে তথ্য প্রকাশে কানাডা সরকারের পক্ষ থেকে আর কোনো বাধা নেই বলেও জানিয়ে দেয় আদালত। কানাডার আদালত থেকে আইনি জটিলতা মীমাংসা করা গেলে নূর চৌধুরীকে ফেরানো সম্ভব হতে পারে।
বঙ্গবন্ধুর অপর খুনী ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদ দীর্ঘ ২০ বছর ভারতে পালিয়ে ছিলেন। গত বছর দেশে ফিরে আসার পর ঢাকায় গ্রেফতার হন তিনি। অবশেষে গত বছরের ১২ এপ্রিল তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হয়।
সাজাপ্রাপ্ত খুনী আবদুল আজিজ পাশা ২০০১ সালের জুন মাসে জিম্বাবুয়েতে পলাতক অবস্থায় মারা যান বলে জানা গেছে। তবে তার মৃত্যুর বিষয়ে প্রকৃত তথ্য এখনও জানা সম্ভব হয়নি।
সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের মধ্যে খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম ও রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন খানের অবস্থান নিশ্চিত হতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার। এই তিন খুনী বিভিন্ন সময়ে নাম-পরিচয় গোপন করে বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছেন। খন্দকার আব্দুর রশিদ ও শরিফুল হক ডালিম লিবিয়া ও পাকিস্তানে বিভিন্ন সময়ে অবস্থান করেছেন। রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন খান এক সময়ে জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন। এখন তিনি ভারত বা পাকিস্তানে পালিয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে প্রকৃত পক্ষে এই তিন খুনী কোথায় অবস্থান করছেন, তা এখনো নিশ্চিত নন কেউ।
বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বাংলানিউজকে বলেন, খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। বিদেশে পালিয়ে থাকা ৫ খুনীর মধ্যে ২ জনের অবস্থান আমরা জানি। বাকি ৩ জনের অবস্থান খুঁজে বের করার জন্য আমরা কাজ করছি।
এদিকে সম্প্রতি ড. মোমেন মুজিব বর্ষের মধ্যেই অন্তত একজন খুনীকে দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকরের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ১২ খুনীর মধ্যে ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। এই ৫ জন হলেন- সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ, এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন।