নোবেল বিজয়ী ৪০ জনের সাথে সাক্ষাত করেছেন কুবি শিক্ষার্থী

কাতিব হাসান মুরাদ কুবি:

বিশ্বে এ যাবতকালে রসায়নে ১৮৭ জন নোবেল বিজয়ীর মধ্যে ৪০ জন বিজয়ীর সাথে দেখা করার সুযোগ পেয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী খন্দকার আফরিনা হক।

তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের তৃতীয় ব্যাচ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সপ্তম ব্যাচের (২০১২-১৩ সেশন) শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে এম ফিল করছেন।

২০২২ সালের ২৬ জুন থেকে ১লা জুলাই পর্যন্ত লিন্ড্যাও নোবেল লরিয়েটের ৭১ তম মিলনমেলায় যোগ দিতে জার্মানিতে যাবেন তিনি। যেখানে ৪০ জন নোবেল বিজয়ীর সাথে সাক্ষাতের পাশাপাশি তিনি রসায়নে বিশ্বের সেরা ৬০০ বিজ্ঞানীর সাথে নিজের গবেষণা অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ পাবেন।

বাংলাদেশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের পৃষ্ঠপোষকতায় নানা যাচাই-বাছাই শেষে বাংলাদেশ থেকে মনোনীত কয়েকজনের মধ্যে মাত্র দুইজনকে এবার আমন্ত্রণ জানিয়েছে লিন্ড্যাও নোবেল লরিয়েট কমিটি। তাদেরই একজন খন্দকার আফরিনা হক।

এই আমন্ত্রণ পেয়ে  উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে খন্দকার আফরিনা হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ রসায়নে নোবেল পাওয়া অনেক কষ্টসাধ্য ব্যপার। এরকম মেধাবী ৪০ জনের সাথে আমি সাক্ষাত করে কথা বলতে পারবো এটা ভেবে আমি অনেক আনন্দিত। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা জায়গা থেকে এতো দূরে আসতে পারবো এটা আমি কোনদিনও কল্পনা করি নি। আমি একটা জিনিস বিশ্বাস করি যে প্রত্যেকে নিজ নিজ লক্ষ্যে অটুট থাকলে অবশ্যই সফলতা আসবে এবন আমি তা ই করেছি।’

কুমিল্লার মেয়ে আফরিনা কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়ার বাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও কুমিল্লা মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২-১৩ সেশনে রসায়ন বিভাগে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে এ যাবতকালে সর্বোচ্চ ফলাফলধারী আফরিনা হক শুরু থেকেই ছিলেন গবেষণামুখী। স্নাতকে ৩.৮৯ এবং স্নাতকোত্তরে ৩.৯২ পেয়ে অসাধারণ ফলাফল করা আফরিনা পূর্বের গবেষণা প্রকাশনা এবং নিজের রসায়নে আরও গবেষণার আগ্রহের কারণে এই আমন্ত্রণ পেয়েছেন।

আফরিনা বলেন, ‘আমার আগে থেকেই গবেষবার প্রতি ঝোক ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে সেই পথ সুগম হয়েছে। কুবি থেকেই আমার গবেষণার হাতেখড়ি। এখন বুয়েটে আল নকীব চৌধুরী স্যারের অধীনে গবেষণা করছি। তিনিই আমাকে এই ইভেন্টে আবেদন করতে বলেছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘স্যার যে আমাকে এরকম একটা প্রোগ্রামের জন্য যোগ্য ভেবেছেন তাতেই আমি আনন্দিত ছিলাম। শেষ পর্যন্ত লিন্ড্যাও নোবেল লরিয়েট কমিটি থেকে যখন  আমন্ত্রণও পেয়ে গেলাম তখন সেটা আমার কাছে কতো বড় ব্যাপার তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।’

লিন্ড্যাও নোবেল লরিয়েট মিটিংয়ের এবারের মিলনমেলায় বিশ্বের নানাপ্রান্ত থেকে আফরিনার মতো এমন তরুণ ও যোগ্য এক হাজার রসায়ন গবেষক যোগদানের সুযোগ পাচ্ছেন।

এই সুযোগ পেতে কী কী শর্ত বা ধাপ পার করতে হয়েছে জানতে চাইলে আফরিনা বলেন, ‘তারা মূলত দেখেছে অ্যাকাডেমিক ফলাফল কেমন, গবেষণার দক্ষতা এবং আগ্রহ। আমার মনে হয়েছে যে আমার মাঝে এগুলো আছে তাই আমি আবেদন করেছিলাম।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি আমার শিক্ষকদের কাছে কৃতজ্ঞ। তারাই আমাকে গড়েছেন আর আমি আমার সর্বোচ্চ পরিশ্রম করেছি, পড়াশোনা করেছি। তারই ফল পেলাম।’

আফরিনার এমন সাফল্যে খুশি তার শিক্ষকেরাও। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. সৈয়দুর রহমান বলেন, ‘আফরিনা শুরু থেকেই মেধাবী ও পরিশ্রমী ছিল। গবেষণার প্রতি ঝোঁক ছিল। লিন্ড্যাও নোবেল লরিয়েটে উদীয়মান রসায়নবিদ হিসেবে তার এই আমন্ত্রণ পাওয়ার সংবাদ বিভাগের জন্য খুবই গর্বের। এমন শিক্ষার্থীরাই বিভাগের সম্পদ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের তারকা। আমরা তার আরও সাফল্য প্রত্যাশা করি।’

উল্লেখ্য, লিন্ড্যাও নোবেল লরিয়েট মিটিংগুলো শরীরবিদ্যা, চিকিৎসা, পদার্থবিদ্যা এবং রসায়ন এই তিনটি প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কারের বিষয়ে ফোকাস করে হয়ে থাকে৷ প্রতিটি লিন্ড্যাও মিটিং বিভিন্ন সেশন, বক্তৃতা, আলোচনা, মাস্টার ক্লাস, প্যানেল ডিসকাশন এবং নোবেল বিজয়ীদের সাথে তরুণ বিজ্ঞানীদের জ্ঞান, ধারণা এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়কে কেন্দ্র করে সাজানো হয়।

Post Under