নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার মাঠে বেগুন গাছে লাউ ঝুলতে দেখা গেছে। প্রথমে দেখে মনে হবে লাউই ধরেছে। কাছে গেলে ভুল ভাঙ্গবে। দেখতে লাউয়ের মতো তবে বেগুন। ওজন ৮০০গ্রাম থেকে এক কেজি। এই বেগুন দেখতে ও কিনতে মানুষ প্রায় মাঠে ভিড় করছেন। স্বাদ ভালো ও ওজন বেশি হওয়ায় এর চাহিদাও প্রচুর। ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষকরা।
সরেজমিন কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বড় গোবিন্দপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শীতের সকালের সোনা রং রোদ। এর মাঝে থরে থরে সাজানো গোছানো ফসলের মাঠ। দুই তিন প্রজাতির পাখি শিস দিয়ে এদিক ওদিক উড়ে যাচ্ছে। জমির কোনটিতে বেগুন,কোনটিতে টমেটো,ফুলকপি,বাঁধাকপির চাষ হয়েছে। নিচু জমিতে ধান চাষ হয়েছে। কিছু বেগুনের জমি নেট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। তবে বেগুনের জমির পাশে দেখা গেল বেশি মানুষের ভিড়। কারণ ব্যতিক্রম লাউ বেগুন ক্রয় করতে আসা।
স্থানীয় ক্রেতা আবুল কাশেম বলেন, বেশি চাষ হলে বেগুন ১০টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়। বেগুন কেনা ও খাওয়ায় এই এলাকায় তেমন আগ্রহ নেই। তবে বারি বেগুন-১২ নিয়ে মানুষের প্রচুর আগ্রহ রয়েছে। এত বড় বেগুন আর দেখিনি। স্বাদ ভালো। তাই পুনরায় কিনতে এসেছি।
স্থানীয় কৃষক মো. আমির হোসেন ভুইয়া বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শে বারি বেগুন-১২ প্রথমবারের মতো চাষ করেছি। ৩০ শতাশং জমিতে ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে নিতে হয় না। জমি ও বাজারে যাওয়ার পথেই কাড়াকাড়ি করে কিনে নিয়ে যায়। সাধারণ বেগুন ২৫-৩০টাকা হলেও এটি ৪০-৪৫টাকা কেজি ধরে বিক্রি হয়।
আরেক কৃষক শাহজাহান ভুইয়া বলেন, ফলন দেখে অন্য কৃষকরাও আগ্রহী হচ্ছেন। এই বেগুনের স্বাদ ভালো হওয়ায় পাখি খেয়ে ফেলে। তাই জমিতে নেট দিয়েছি।
স্থানীয় উপ-সহকারী কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ার বলেন,এখানে কয়েকটি প্রদর্শনী প্লট দেয়া হয়েছে। ভালো ফলন হয়েছে। এই বেগুনে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়। ভালো ফলনের কারণে এই বেগুন কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মনিরুল হক রোমেল বলেন,২০২১ সালে বারি বেগুন-১২ এর সম্পর্কে ধারণা পাই। এই বেগুনের বীজের জন্য বারিতে চিঠি লিখি। বারি কুমিল্লা কার্যালয় থেকে কিছু বীজ পাই। এটি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিই। ভালো ফলন হয়েছে। বড় আকারের বেগুন দেখে স্থানীয়রা অবাক হয়েছে। আমরা আশা করি এই বেগুন চাষ পুরো উপজেলায় ছড়িয়ে পড়বে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মো.মিজানুর রহমান বলেন,বারি বেগুন মূলত এসেছে পটুয়াখালীর একটি রাখাইন সম্প্রদায় থেকে। তারা দীর্ঘদিন চাষ করতো। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সেখান থেকে বীজটি সংগ্রহ করেছে। তারা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বারি বেগুন- ১২ নামে মাঠে ছাড়ে। জেলায় এই বছর ২০টি প্রদর্শনী হয়েছে। এটি কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এর বীজ সংগ্রহ করে কৃষকরা পুনরায় চাষ করতে পারবেন।