বহুল আলোচিত অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের দুই শীর্ষ নেতার চরমে পৌঁছা দ্বন্দ্বের অবসান ঘটেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে আল জামেয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসার (হাটহাজারী মাদ্রাসা) মহাপরিচালক ও হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী অসুস্থ হওয়ায় মাদ্রাসার মোহতামিম ও মুঈনে মুহতামিম নিয়োগসহ হেফাজতের নানা ইস্যু নিয়ে হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে শুরু হয় স্নায়ুযুদ্ধ।
এরমধ্যে শূরা কমিটির মাধ্যমে মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালকের পদ থেকে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে সরিয়ে দিয়ে মাদ্রাসার সিনিয়র মহাদ্দিস মাওলানা শেখ আহমদকে ওই পদে স্থলাভিষিক্ত করা হয়। ফলে হেফাজতের এ দুই শীর্ষ নেতার স্নায়ুযুদ্ধ এক পর্যায়ে প্রকাশ্যে রূপ নেয়।
এছাড়া হেফাজত আমিরের পুত্র মাওলানা আনাস মাদানীর একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ভাইরাল হলে ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়। এরপর হেফাজতের এ দুই শীর্ষ নেতা গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন বিবৃতির মাধ্যমে মুখ খুলতে শুরু করে।
বিবৃতিতে উভয়ে হেফাজত ট্র্যাজেডির জন্য একে অপরকে বিরুপ মন্তব্য করে দোষারূপ করেন। যা নিয়ে মিডিয়াপাড়া ও ফেসবুক-ইউটিউবে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ বেশ সরব ছিল।
তবে গত বুধবার সন্ধ্যায় হাটহাজারী মাদ্রাসার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রায় ২০ মিনিটের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর পাশে বসা এবং হেফাজত আমিরের পুত্র আনাস মাদানীও তাদের পাশে অবস্থান করছেন।
এ সময় হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হাটহাজারী মাদ্রাসা, দেশ ও জাতির মধ্যে সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে যেন বিশৃঙ্খলা বা ভুল বুঝাবুঝি না হওয়ার জন্য এ ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও তার পুত্র আনাস মাদানীকে নিয়ে বিরুপ মন্তব্য না করার অনুরোধ জানান।
এছাড়া উভয়ের সমঝোতায় উপনীত হয়েছে এমনটা দাবী করে হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী আনাস মাদানীকে ভাই হিসেবে সম্মোধন করে তার ও হেফাজত আমিরের লিখিত বক্তব্য পাঠের অনুরোধ করেন।
আনাস মাদানীর পাঠ করা লিখিত বক্তব্যে হেফাজত মহাসচিব বলেন, হুজুর পুত্র আনাস মাদানী আমার ছোট ভাইয়ের মতো। আমাদের মাঝে কোন দূরত্ব নাই। কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে মাত্র। ঘরের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হলে যেমন সবাই বসে সেটা সমাধান করে। আমরাও বসে ভুল বুঝাবুঝি সমাধান করে নেব। আমাদের মুরুব্বীরা সমাধান করে দেবেন।
তিনি আরও বলেন, হেফাজত আমির সর্বজন শ্রদ্ধেয়। আমাদের জন্য নেয়ামতে উজমা। আমাদের মাথার ছায়া, মুকুটহীন সম্রাট। আমরা যারা হুজুরের মনে কষ্ট দেব তা আল্লাহর ওলির সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করার শামিল।
কিন্তু দু:খের বিষয় আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও তার পুত্র আনাস মাদানীকে নিয়ে দৈনিক পত্রিকা, সোশ্যাল মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং ফেসবুক পেজে বিরুপ মন্তব্য ও লেখালেখি করা হচ্ছে। এতে আমাদের ভুল বুঝাবুঝি ও দুরত্ব আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই আপনার যারা ইসলাম, আলেম-ওলামা ও দ্বীনকে ভালবাসেন তারা এ ধরণের বিরুপ মন্তব্য বন্ধ করবেন। দুরে থাকবেন। এটাই আমার অনুরোধ।
হাটহাজারী মাদ্রাসা সকলের মাদ্রাসা এমনটা জানিয়ে বাবুনগরী বলেন, দ্বীনকে রক্ষার জন্য আমাদের মুরব্বীরা খেয়ে না খেয়ে এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাই আসুন আমরা সবাই হাটহাজারী মাদ্রাসার হজরতের জন্য ভালোবাসা-মহব্বতের অন্তর খুলে দেই। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর নিকট তওবা করি। আল্লাহ আমাদের মাফ করে দিন। -তথ্য সূত্র: দৈনিক যুগান্তর