কসবায় জামাল হত্যার জেরে ভোল্লাবাড়ি গ্রাম জনমানব শুন্য

কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ভোল্লাবাড়ি গ্রামে জামাল হত্যার জের ধরে পুরো গ্রামে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। নিহত জামালের প্রতিপক্ষের লোকেরা বাড়িঘর ছেড়ে পাশ্ববর্তী আখাউড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের দাবী হুমকীর মুখে তারা বাড়িঘর ছেড়েছে। নিহত জামাল ও হুমায়ুন মিয়ার লোকজন তাদের বাড়িঘর থেকে বের করে বাড়ির মালামাল লুটপাট করে বাড়িতে নিজেরা নতুন তালা লাগিয়ে দিয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার অদুরে সীমান্তবর্তী দুর্গম ভোল্লাবাড়ি গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিহত জামালের বাড়িতে এখনো শোকের মাতম চলছে। একমাত্র উপার্জনক্ষম জামাল নিহত হওয়ার পর পরিবারটির সামনে ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পরেছে।
হত্যা মামলার বাদী নিহত জামালের বোন জরিনা বেগম সাংবাদিকদের বলেন; আমরা এই হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার চাই।

ভোল্লাবাড়ির প্রায় ১৪/১৫টি বাড়িতে ঘুরে দেখা যায় কোনো বাড়িতে লোকজন নেই। শুধু দরজায় তালা লাগানো। গত ৩১ আগষ্ট জামাল খুন হওয়ার পর আসামী পক্ষের লোকজন গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। আসামী পক্ষের মানিক, রহিম, ওলুচান, মর্জিনা বেগম, আবু জামাল, আবু তাহের মিয়া, রুক্কু মিয়া, সিদ্দিক মিয়াসহ আরো ১৬/১৭টি বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তাদের বাড়িতে কোন লোকজন নেই। বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের তালা ঝুলছে। গ্রামের বাছির মিয়ার কন্যা ৬ষ্ঠ শ্রেণির স্কুল ছাত্রী সাদিয়া জানায়; আমার কাকা জামাল মিয়াকে মেরে ফেলার পর ভয়ে সবাই বাড়ি ফেলে চলে গেছে।

ভোল্লাবাড়ি গ্রামের পাশ্ববর্তী আখাউড়া উপজেলার রাজভল্লবপুর গ্রামে জজু মিয়ার বাড়িতে গেলে জজুর মা জোবেদা খাতুন (৭০) জানান; ৭/৮ বছর আগে নিহত জামাল ও হুমায়ুনরা তার স্বামী মঞ্জুর আলীকে হত্যা করেছে। কোনো বিচার পাননি। মৃত মিন্টু মিয়ার স্ত্রী আয়েশা বেগম, মৃত রহিম মিয়ার স্ত্রী রূপবান বেগম, সুদন মিয়ার স্ত্রী রাবেয়া বেগম, সবুজের স্ত্রী পাখি আক্তার, সোনা মিয়ার স্ত্রী মঙ্গলের নেছা সবাই আখাউড়া উপজেলার রাজভল্লবপুর গ্রামে সাংবাদিকদের দেখে কথা বলার আকুতি জানায়। তারা বলেন; তারা এক সময় হুমায়ুন ও নিহত জামালের দল করতো। কিন্তু দলাদলির জন্য চাঁদা না দেয়ায় জামাল খুন হওয়ার পর হুমকি দিয়ে তাদেরকে গ্রাম থেকে বের করে দেয় হুমায়ুনের লোকজন। ফলে তারা এখন গ্রামছাড়া। তারা বলেন; আমরা দলাদলী চাইনা। গ্রামে শান্তি চাই। আমাদের সম্পদ গরু ছাগল সবই লুট করেছে নিহত জামাল ও হুমায়ুনের লোকজন।

এদিকে হুমায়ুন, ফারুক মিয়া ও বাছির মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলেন; তারা কোনো লুটপাট করেনি। এরা নিজেরাই নিজেদের মালামাল নিয়ে তালা লাগিয়ে চলে গেছে। এদিকে হুমায়ুনের লোকদের দেখা যায় গ্রামের মোড়ে মোড়ে টহল দিতে।
এ বিষয়ে কসবা থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ লোকমান হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন; জামাল হত্যার আসামী গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা চলছে। লুটপাটের কোনো ঘটনা ঘটেছে তারা এমনটি শুনেননি। এলাকায় পুলিশী নজরদারী রয়েছে।

উল্লেখ্য; গত ৩১ আগষ্ট সকালে আধিপত্যের জের ধরে স’মিল শ্রমিক জামালকে প্রতিপক্ষের লোকজন নোয়ামুড়া সড়কে বেদম প্রহার করে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করলে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে বিকেলে সে মারা যায়।

 

 

 

Post Under