স্টাফ রিপোর্টারঃ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রে বারংবার অচল ছিলো ক্যাম্পাস। বিগত সময়ে দিনের পর দিন তালাবদ্ধ থাকায় অচলাবস্থা বিরাজ করে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে। শিক্ষার্থীরা মারাত্মক সেশনজটে পরে। বিগত ৫জন ভিসির তিনজনই পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারেনি। দুজন মেয়াদ শেষ করলেও নানা আন্দোল সংগ্রামের স্বীকার হন। শেষ পর্যন্ত লাঞ্ছিত হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়েন। বর্তমান ভিসি ড. এমরান কবির চৌধুরীর মেয়াদের তৃতীয় বর্ষ চলছে। এখন আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে স্বার্থান্বেষী শিক্ষকদের একটি চক্র।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় ২০০৭ সালের ২৮মে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার এক বছরের মাথায় ঠুনকো কিছু বিষয়ে আন্দোলনে নামে কতিপয় শিক্ষক। লেলিয়ে দেয় ছাত্রদেরও। পরের বছরই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন প্রতিষ্ঠাকালীন ভিসি ড. গোলাম মাওলা।
ভারপ্রাপ্ত ভিসি হন গনিত বিভাগের প্রফেসর ড. জুলফিকার আলী। ভয়াবহ শিক্ষক সংকটের ফলে শিক্ষক নিয়োগের সার্কুলার প্রকাশ হয়। তখনকার শিক্ষকদের ওই চক্রটি হাইকোর্টে রিট করে তখন সকল প্রকার নিয়োগ স্থগিত করে দেয়। ফলে মুখ থুবরে পড়ে শিক্ষা কার্যক্রম। পরবর্তীতে পূর্নাঙ্গ ভিসি হিসেবে নিয়োগ পান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতা প্রফেসর ড. জেহাদুল করিম। শুরুটা ভালো চললেও এক বছর যেতে না যেতেই শিক্ষকদের একটি চক্র তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে। ২০০৯ সালে শিক্ষক-ছাত্র আন্দোলনে ক্যাম্পাস বন্ধ ছিলো ৮মাস। ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা তখন তালাবদ্ধ রেখে ড. জেহাদুল করিমকে লাঞ্ছিত করে। রাতে পুলিশ পাহাড়ায় পদত্যাগের আশ্বাস দিয়ে তিনি ক্যাম্পাস ছাড়েন।
পরবর্তীতে ভিসি হিসেবে আসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আমির হোসেন খান। প্রথম দুবছর শিক্ষকদের ওই মহলটি বিভিন্ন সুবিধা আদায়ে ভিসির সাথে ভালোই ছিলো। কিন্তু বিপত্তি হয় কিছু অন্যায় দাবি না মানায় ভিসির বিরুদ্ধে ফের অান্দোলনে নামে। টানা ৩৭ দিন ক্লাস পরিক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাস অচল করে সুবিধা আদায়ে ভিসিকে বাধ্য করা হয়। শেষ বছরে নানাভাবে চাপে রেখে, আন্দোলন করে ভিসির নিকট থেকে নানা সুবিধা আদায় করে ওই চক্রটি। শেষদিকে আন্দোলন করে নতুন ভিসি এলে কাছে ভীরে সুবিধা আদায় করা স্বার্থান্বেষী ওই মহলটির টেকনিক।
ড.আমির হোসেন খানের মেয়াদ শেষ হলে নতুন ভিসি হিসেবে আসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আলী আশরাফ। প্রথম তিন বছর ক্যাম্পাস ঠিকভাবে চললেও শেষ বছরে নানামুখী শিক্ষক আন্দোলনে অচল থাকে ক্যাম্পাস। ভিসি দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে তাঁকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। একপর্যায়ে ভিসির বাসভবনে তালা দিয়ে গেটে অবস্থান নেন শিক্ষকদের ওই চক্রটি।
সিন্ডিকেট মিটিংয়ে অংশ নিতে ক্যাম্পাসে এলে তৎকালীন ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নানকেও শিক্ষকরা লাঞ্ছিত করে। শেষ সময়ে নানা তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে বিদায় নেন ড. আলী আশরাফ।
এরপর ভিসি হিসেবে দায়িত্ব নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী। দায়িত্ব নেয়ার পরই বিশ্বিবদ্যালয়ের জন্য ১৬৫৫ কোটি টাকার সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প পাশ করে আনেন। ২০০একরের ভূমি অধিগ্রহণ এবং মাস্টারপ্ল্যান অনুয়ায়ী নানন্দিক ক্যাম্পাসের কাজ ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীকে দেয়া হয়। প্রথম সফল সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজন এবং বর্তমান ক্যাম্পাসের দৃশ্যমান উন্নয়নে সর্বমহলে বেশ প্রসংশিত হন।
কিন্তু বর্তমান ভিসির মেয়াদের তৃতীয় বর্ষে এসে ফের সক্রিয় সুবিধাভোগী ওই শিক্ষক চক্রটি। তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে নানামুখী চাপে রাখছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিশ্ববিদ্যালয় গ্রুপে অনেক শিক্ষার্থীই শিক্ষকদের একটি মহলের এহেন নোংরা রাজনীতির সমালোচনা করেন। তারা দাবি করেন ক্যাম্পাসের স্বার্থে সকলকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।
সাবেক এক শিক্ষার্থী পোস্ট করেন, শিক্ষকরা পড়ানোর চাইতে রাজনীতি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এটা দুঃখজনক।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক জানান, যারা প্রথম দিকে সুবিধা নেয়, তারাই মেয়াদ ফুরিয়ে এলে ভিসি বিরুধী হয়ে উঠে। এ কালচার দুঃখজনক। শিক্ষকদের উচিত শেষ সময় পর্যন্ত উপাচার্যকে সহযোগিতা করা।