এমদাদুল হক সোহাগ:
কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট সংগ্রহ করতে গিয়ে সম্প্রতি বিড়ম্বনায় পড়ছেন যাত্রীরা। টিকিট সংগ্রহের কাউন্টার তিনটি থাকলেও দুটি বন্ধ রেখে মাত্র একটি খোলা রাখায় এই বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। টিকিটের জন্য দীর্ঘ লাইন ধরেও টিকিট কাটতে পারেন না যাত্রীরা। এতে করে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে যাত্রীরা পোহাচ্ছেন দুর্ভোগ। বিশেষ করে সকাল সাতটা থেকে আটটায় ঢাকাগামী উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের জন্য টিকিট কাউন্টিারের সামনে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন ধরতে হয়। ট্রেন প্লাটফর্মে ঢুকে পড়ার পর আর কেউ টিকিট পাননা। কোন রকমে দৌড়ে ট্রেনে উঠে গন্তব্যে পৌছান। তাছাড়া চট্টগ্রাম অভিমুখী মহানগর প্রভাতী, ঢাকা অভিমুখী চট্টলা, মহানগর এক্সপ্রেস, সিলেট অভিমুখী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম অভিমুখী পাহাড়িকা, মহানগর গোধূলী, ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন সহ গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনের যাত্রার সময় টিকিটের জন্য যাত্রীদের প্রচন্ড ভিড় দেখা দেয়। দীর্ঘ লাইনের কারনে আসন সহ অথবা আসন বিহীন কোন টিকিট না পেয়ে বিনা টিকিটে বাধ্য হয়ে ট্রেনে ভ্রমণ করেন যাত্রীরা। এতে করে কেউ কেউ ট্রেনের ভেতর হয়রানি, টিটিইকে নির্ধারিত ভাড়া সহ জরিমানা, ট্রেনের এটেন্ড্যান্ট, নিরাপত্তা বাহিনী, ক্যাটারিং সার্ভিসের লোকদের টাকা দিয়ে ট্রেন ভ্রমণ করতে হয়। এতে করে একটি সুবিধাবাদি চক্রের পকেটে যাত্রীদের টাকা চলে যাওয়ায় সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
রোববার সকাল পুনে আটটায় সরজমিনে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, টিকিট কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের প্রচুর ভিড়। আন্তনগর ট্রেনের দুটি কাউন্টার ও একটি সাধারণ কাউন্টিার থাকলেও মাত্র একটি কাউন্টার খোলা রেখে বাকী দুটি কাউন্টারের সামনে কাগজের কার্টুন দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এসময় ট্রেনের ব্যবস্থাপনা নিয়ে যাত্রীদের নানান বিরুপ মন্তব্য লক্ষ করা যায়।
এদিকে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ট্রেনের মহিলা যাত্রীর সংখ্যা। মহিলাদের জন্য আলাদা কোন টিকিট কাউন্টার না থাকায় তারাও পড়েছেন বিপাকে। পুরুষদের সাথে পাল্লা দিয়ে টিকিট কাটতে হয় তাদের। অধিকাংশ মহিলা যাত্রীদের দাবি, মহিলাদের জন্য যাতে আলাদা কাউন্টার করা হয়।
মাহফুজুর রহমান মিল্টন নামের একজন যাত্রী কুমিল্লা থেকে কসবা রেলওয়ে স্টেশনে যাবেন। স্টেশনে টিকিট কাউন্টারে দাড়িয়েছেন আসন বিহীন টিকিট সংগ্রহ করার জন্য। কিন্ত দীর্ঘ লাইনের কারনে তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, কেউ দেখার নেই। যার যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই মনে হয় চলছে। এতগুলো মানুষ টিকিটের জন্য দাড়ানো অথচ একটি মাত্র কাউন্টিার। শেষপর্যন্ত ট্রেন প্লাটফর্মে ঢুকে পড়ায় টিকিট না পেয়েই বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠেন তিনি।
কসবা উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো: আমির হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরেই একটি কাউন্টার খোলা রাখায় যাত্রীদের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। অন্তত পক্ষে দুটি কাউন্টার খোলা রাখলেও যাত্রীদের সমস্যা হতোনা। অনেক সময় ইচ্ছা থাকলেও টিকিট না পেয়ে বিনা টিকিটে চলতে হচ্ছে যাত্রীদের। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান দাবি করেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া অভিমুখী যাত্রী কুমিল্লা বিশিষ্ট চক্ষু ডাক্তার বশির আহম্মেদ বলেন, কর্তৃপক্ষের উচিত এগুলোতে নজর দিয়ে যাত্রীসেবার মান আরো বৃদ্ধি করা। এতে করে রেলেরই ক্ষতি হচ্ছে। সুনাম নষ্ট হচ্ছে।
মমিনুল ইসলাম নামের ঢাকাগামী আরেক যাত্রী বলেন, একটা কাউন্টার অথচ প্রচুর মানুষ। ট্রেন চলে আসার সময় হয়েছে। এটা কোন কথা? কর্তৃপক্ষ কি বিষয়টি দেখেন না। এই স্টেশনের মাস্টার সহ অন্যান্য যারা উর্ধ্বতন কর্মকতারা আছেন তারা কোথায়? তাদের কাজটা কি? যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধি করতে না পারলে রেলের জন্য সরকারের এত উন্নয়ন কাজে আসবে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, আসন বিহীন টিকিট কাটলেও সরকারের ঘরে টাকাটা জমা পড়ে। কিন্তু টিকিট না কাটলেতো যাত্রীদের অন্যভাবে ম্যানেজ করে গন্তব্যে যেতে হয়। কয়জনের টাকা সরকার পায়? সবতো ট্রেনের ভেতরের কিছু দুর্নীতিবাজ রেলের লোকজনই খেয়ে শেষ করে ফেলে।
কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো: মাহাবুবুর রহমান বলেন, জনবল সংকটের কারনে সব কাউন্টারে টিকিট দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। সবসময় টিকিটের জন্য যাত্রীদের ভিড় থাকেনা। কেবল মাত্র কয়েকটি ট্রেনের যাত্রার সময় টিকিট কাউন্টারের সামনে ভিড় হয়। ট্রেন চলে গেলে ভিড়ও চলে যায়।
রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের ব্যবস্থাপক মো: আবিদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে মুঠোফোনে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি বিষয়টি জানার চেষ্টা করবো এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।