কুসিকের প্রধান নির্বাহীকে অবরুদ্ধ, বিক্ষোভ, কক্ষে তালা!

এমদাদুল হক সোহাগ, কুমিল্লা:
বেতন বৃদ্ধি, চাকরি স্থায়ীকরণ, উৎসব ভাতা, মাতৃত্বকালীন ছুটি, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, কাউন্সিলর পরবির্তনের সাথে সাথে চাকরিচ্যুত না করা, মজুরী বৈষম্য দূর করা, কর্মক্ষেত্রে আহত বা অসুস্থ্য হলে সু চিকিৎসার ব্যবস্থা, কোন কর্মী মারা গেলে পরিবারকে নূন্যতম পাঁচ লাখ টাকা প্রদান সহ বিভিন্ন দাবিতে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মাস্টার রোল (এম.আর) কর্মচারীরা আন্দোলন শুরু করেছে। দাবি আদায়ের জন্য তারা কাজ ফেলে প্রধান র্নিবাহী (যুগ্ম সচিব) মো: ছামছুল আলমকে অবরুদ্ধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা প্রধান নির্বাহীর কক্ষে তালা সহ নগর ভবনের প্রবেশ ও বাহিরের পথে তালা ঝুলিয়ে ভূয়া ভূয়া স্লোগান দিতে থাকেন।
বুধবার দুপুর থেকে আন্দোলনরত কর্মীরা এক জোট হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক সাইফ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন না। এদিকে, সিটি কর্পোরেশনের অফিস সহকারি মাহাবুবুর রহমান নামের এক কর্মীকে আহত ও লাঞ্চিত করেছেন আন্দোলন কারীরা। মাহাবুবুর রহমান প্রধান নির্বাহীর কক্ষে দায়িত্ব পালন করেন। আন্দোলনকারীরা কক্ষে প্রবেশ করতে চাইলে বাঁধা দেন মাহাবুব, এতে উত্তেজিত কর্মীরা তাকে মারধর ও লাঞ্চিত করেন।

আন্দোলনরত কর্মীরা জানান, দৈনিক ৩৫০ টাকা হাজিরা ভিত্তিতে তারা দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করে যাচ্ছেন। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে এই টাকা দিয়ে কিছুই করতে পারেন না তারা। তাছাড়া মাসের ত্রিশ দিন তাদের কাজ থাকেনা সেক্ষেত্রে মাসিক বেতন আরো কম হয়। অনেকে ছয় হাজার টাকা বেতন পান। এসব টাকায় তাদের সংসার চলেনা।

পরিচ্ছন্নতাকর্মী মান্নান মিয়া বলেন, তিনি কুমিল্লা নগরীর চার নম্বর ওয়ার্ড কাপ্তান বাজার এলাকায় কাজ করেন। সকাল ছয়টা থেকে দশটা পর্যন্ত চার ঘন্টা ডিওটি করেন। পুরো মাস কাজ করে তিনি ৬ হাজার তিনশ টাকা বেতন পান।
ময়লার গাড়ি চালক মো: হানিফ মিয়া বলেন, কোন বোনাস নাই দৈনিক ৩৫০ টাকা মজুরীতে ১০ হাজার পাঁচশ টাকা হারে বেতন পাই। আবার যেদিন কাজ নাই, সেদিনের বেতন নাই। কোন ছুটি নাই, ভাতা নাই। দীর্ঘবছর কাজ করছি, চাকরি স্থায়ী করন নাই। ঝাড়ুদার ফাতেমা বেগম জানান, তিনিও সাড়ে ছয় হাজার টাকা বেতন পান, এ টাকায় তার সংসার চলেনা। গাড়ি চালক শামীম বলেন, তাঁর বেতনও ৩৫০ টাকা দৈনিক হারে সাড়ে দশ হাজার, মেয়রের চালকের বিশ হাজার টাকা। তিনি দাবী জানান, বেতন বোনাস বৃদ্ধি করা হউক। মূল বেতন সর্ব নিম্ন ১৬ হাজার ৫০০টাকা করা হউক।

জানা যায়, তিন বছর আগে মাস্টার রোল কর্মচারীদের বেতন দৈনিক ৩০০টাকা হাজিরা ভিত্তিক ছিল। সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু শেষ কর্মদিবসে তাদের দাবীর প্রেক্ষিতে ৫০ টাকা বাড়িয়ে সাড়ে তিনশ করে যান। এর পর থেকে তারা বেতন বাড়ানো সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছেন। বর্তমান প্রধান নির্বাহী যোগদান করার পর তারা বিভিন্ন সময়ে অসংখ্যবার দাবি আদায়ের জন্য আবেদন করেছেন। প্রধান নির্বাহী তাদের আশ্বাস দিলেও কোন দাবি পূরণ করতে পারেননি। তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, সেজন্য আন্দোলন শুরু করেছেন। দাবি মানা না হলে, কর্ম বিরতি চলবে। আন্দোলন আরো কঠোর হবে, পুরো সিটি কর্পোশন কার্যালয় অচল করে দেয়া হবে। বিকেল চারটা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এদিকে, পরিস্থিতি শান্ত করতে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের এসআই ফারুকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম শুরুতেই কাজ করতে দেখা যায়, ফরিস্থিতি বেগতিক আরো আরো অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী যুগ্ম-সচিব মো: ছামছুল আলম বলেন, তাদের দাবি অনুযায়ি আমরা কাজ করছি। বেতন বৃদ্ধি নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশাসক মহোদয়ের সাথে আলোচনাও হয়েছে। আমি চাইলেও একার পক্ষে বেতন বাড়ানো সম্ভব না। যেহেতু আর্থিক বিষয় তাই আইন অনুযায়ি কাজ করতে হবে। আগামি মাসিক মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আজ তাদেরকে আন্দোলন স্থগিত করে কাজে ফিরে যেতে অনুরোধ করেছি। তারা না মেনে বিক্ষোভ করছে, যা দু:খজনক।

Post Under