কুমিল্লায় ৯ বছরের শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে গ্রাম্য শালিস বৈঠকে জুতাপেটা করার পর জেলা ছাত্রলীগ নেতা জয়নাল আবেদিন জয়কে নিয়ে দেশজুরে সমালোচনা শুরুর পর দল থেকে বহিষ্কার হয়েছে।
এর আগে জুতাপেটার ৪১ সেকেন্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে। এ ভিডিও ব্যক্তিগত ওয়ালে আপলোড দিয়ে জেলার ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ওই ছাত্রলীগ নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন।
জয় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। তিনি কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে। এ ছাড়া জয় কুমিল্লার স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক।
সোমবার বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়নের চেঙ্গাহাটা এলাকার চৌমুহনীতে ছাত্রলীগ নেতা জয়ের ওষুধ ফার্মেসির ভিতরে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনাটি ঘটে। শালিস বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন ও স্থানীয় ইউপি সদস্য রতন মেম্বার জানান, চেঙ্গাহাটা চৌমুহনীতে জয়ের একটি ওষুধ ফার্মেসি রয়েছে।
পাশে একটি চা দোকান আছে। দুপুরে মানুষের উপস্থিতি কম থাকায় চা দোকানির নয় বছরের মেয়েটি বাবার দোকানে এলে জয় তাকে তার ফার্মেসিতে ডেকে নেন। জয় তাকে ফার্মেসির পেছনের রুমে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। শিশুটি চিৎকার করলে অন্য দোকানিরা তাকে উদ্ধার করেন। পরে লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান রকেট মজুমদারসহ অন্যরা বসে মীমাংসার চেষ্টা করেন। বৈঠকে শিশু ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা জয়নাল আবেদিন জয়কে জুতাপেটা করা হয়। শালিস বৈঠকের বিচার মেনে নিয়েছে শিশুর পরিবার।
ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আয়াত উল্লাহ জানান, ‘জয় আমার কাছে স্বীকার করেছেন মেয়েটির কাঁধে হাত দিয়ে কিস্ করেছেন মাত্র। তারপর তাকে শালিস বৈঠকে জুতাপেটা করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘যাদের অপকর্মের কারণে ছাত্রলীগ কিংবা আওয়ামী লীগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়, এ ধরনের নেতাদের আওয়ামী লীগের মতো সংগঠনে মানায় না। আমরা তার বহিষ্কার দাবি করছি।’
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা জয়নাল আবেদিন জয় অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘মেয়েটি আমার ফার্মেসিতে গিয়েছে। তবে আমি তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করিনি। শালিস বৈঠকে রকেট ভাই আমাকে ডেকে নিয়ে জুতাপেটা করবেন আগে বুঝতে পারিনি।’
শালিস বৈঠকের বিচারক মাহবুবুর রহমান রকেট বলেন, ‘যৌন নিপীড়নের অভিযোগে এলাকাবাসী জয়কে আটক করে মারধর করেছে। আমার গ্রামের ছেলে হওয়ায় অভিভাবক হিসেবে জুতাপেটা করে তাকে ছাড়িয়ে এনেছি।’
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন রুবেল বলেন, ‘অপরাধ ব্যক্তির, দলের নয়। অভিযুক্ত জয়কে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদক বরাবর আমরা আবেদন করেছি।’
অপরদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্যাডে জয়কে বহিষ্কার করার কপি ফেইসবুকে আপলোড দিয়ে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু তৈয়ব অপি।
লালমাই থানার ওসি মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, ‘আমি বিষয়টি ফেসবুকে দেখেছি। তবে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’