দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল কুমিল্লা

এমদাদুল হক সোহাগ, কুমিল্লা

কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ এম. নার্গিস আক্তার ও কুমিল্লা মডার্ন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আকতার হোসেন ও দিবা শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক  রাসেল উদ্দিন মজুমদারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন প্রতিষ্ঠান দুটির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রবিবার (১৮ আগস্ট) বেলা ১১ টার দিকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।

কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে বিক্ষোভ মিছিলটি ক্যাম্পাসকে বিক্ষুদ্ধ করে তুলে। এসময় শিক্ষার্থীরা, ‘দফা এক দাবি এক, অধ্যক্ষের পদত্যাগ’, ‘দফা এক দাবি এক, নার্গিসের পদত্যাগ, আমাদের প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতিবাজের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

এদিকে রবিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকলেও এদিন প্রতিষ্ঠানের কোন শ্রেণিকার্যক্রমে অংশ নেননি সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, অধ্যক্ষ এম নার্গিস পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবে না।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, কলেজ ও স্কুলের বিভিন্ন খাতে বিভিন্ন সময় দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। পরীক্ষার ফি, জরিমানা ইত্যাদি কারণ দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে নানা সময়ে দুর্নীতি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আমরা এমন দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ আর আমাদের প্রতিষ্ঠানে চাই না। যেখানে অধ্যক্ষই দুর্নীতিবাজ সেখানে শিক্ষার্থীরা কি শিখবে। অধ্যক্ষ পদত্যাগ করা না পর্যন্ত আমরা এই বিক্ষোভ চালিয়ে যাব।

এদিকে, শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে আরো বলেন, দুইজন বহিরাগতকে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালাতে অধ্যক্ষ নার্গিস নিয়ে এসেছেন। তাদের একজন পালিয়ে গেলেও আরেকজনকে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছি।

এদিকে বেলা ১২:৩০ টায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সেনাবাহিনীরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের পাঠানো একটি প্রতিনিধি দল এসে শিক্ষার্থীদেরকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে।

পরে শিক্ষার্থীদেরকে অধ্যক্ষের বাধ্যতামূলক পদত্যাগের নিশ্চয়তা দিয়ে একটি সম্মতিপত্র সাক্ষর দিয়েছেন জেলা প্রশাসকের পাঠানো প্রতিনিধি দলের প্রধান নেজারত  ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) কানিজ ফাতেমা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কানিজ ফাতেমা বলেন, অধ্যক্ষ নার্গিসের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগগুলো ছিল, এই বিষয়ে আমাদের তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। তার দুর্নীতির বিষয়গুলো নিয়ে আগামী ২০ আগষ্ট আমরা বোর্ডের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিবো। এই বিষয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের কে আশ্বস্ত করতে পেরেছি ও নিশ্চয়তা দিয়ে একটি সম্মতিপত্র আমি দিয়েছি।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা জেলার সমন্বয়ক মুহাম্মাদ রাশেদুল হাসান বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো শুনেছি। আমরা এ বিষয়ে আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছে খুব শীঘ্রই প্রতিবেদন রিপোর্ট জমা দিবে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৮ শে এপ্রিল কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ এম. নার্গিস আক্তারের প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রে প্রতিবেদন উঠে এসেছিল। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও অভিভাবকরা অভিযোগপত্র জমা দিলেও জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে, কুমিল্লা মডার্ন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আকতার হোসেন ও দিবা শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক রাসেল উদ্দিন মজুমদারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মিছিলে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় অর্ধ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। মিছিলটি কুমিল্লা কান্দিরপাড় পূবালী চত্ত্বরে এসে অবস্থান নেয় ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে।

এসময় শিক্ষার্থীরা, ‘দফা এক দাবি এক, প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ’, ‘দফা এক দাবি এক, আক্তার হোসেনের পদত্যাগ, চেয়েছিলাম শিক্ষক, পেয়েছি ভক্ষক, রাজনৈতিক চাটুকারের ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রধান শিক্ষক আকতার হোসেন ও দিবা শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক রাসেল উদ্দিন মজুমদার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবে না।

শিক্ষার্থীরা আরো অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক আকতার হোসেন ও সহকারী প্রধান শিক্ষক রাসেল উদ্দিন স্কুলের বিভিন্ন খাতে বিভিন্ন সময় দুর্নীতি ও অনিয়ম করে যাচ্ছেন। উনার দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করার আহবান জানাই। আমরা এমন দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক আর আমাদের প্রতিষ্ঠানে চাই না। এছাড়াও, সহকারী প্রধান শিক্ষক রাসেল উদ্দিন মজুমদার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে বাধ্যতামূলক বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিয়ে যেতো। কেউ না গেলে, তাকে বিভিন্নভাবে হেনস্থা করতো। এছাড়াও, প্রধান শিক্ষক নিজেও রাজনৈতিক প্রভাবে প্রধান শিক্ষক হয়েছেন ও রাজনৈতিক চাটুকার ছিলেন। আমরা এমন রাজনৈতিক চাটুকার প্রতিষ্ঠান প্রধান আর চাই না।

এদিকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে কান্দিরপাড় পূবালী চত্ত্বরে এসে সড়ক অবরোধ করলে এতে শহড়জুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়ে কুমিল্লা মডার্ন হাই স্কুলের সভাপতিঅধ্যাপক জামাল নাছের বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের কে এটা বলে আশ্বস্ত করেছি যে তারা যে দুইজন শিক্ষকের পদত্যাগ চাচ্ছে আমরা তাদের সঙ্গে যুক্তি পরামর্শ করবো ও তাদেরকে পদত্যাগ করতে বলবো। এবং আমি নিজেও সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

Post Under