এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
অনতিদূরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জনবসতি, ফসলি জমি, মহাসড়ক।এমনি স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে পিড়ানো হয় ইট, নষ্ট করা হয় পরিবেশের ভারসাম্য। প্রশাসনের আরোপিত নিষেধাজ্ঞাও উপেক্ষিত প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের কাছে। এই চিত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রায় এলাকাতেই। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আবেদন-নিবেদন, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের প্রেক্ষিতে প্রশাসন মাঝেমধ্যে এসব ইটভাটার বিষয়ে অস্থায়ী পদক্ষেপ নিলেও ফের হয়ে ওঠেন সক্রিয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় এমনি দু’টি ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রশাসন গ্রহণ করেছেন অস্থায়ী (জরিমানা আদায়) পদক্ষেপ।
জেলার কসবা উপজেলা প্রশাসন বুধবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়ন এলাকায় অবৈধভাবে স্থাপিত দু’টি ইটভাটায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালিয়ে ভাটা মালিকদেরকে ছয় লাখ টাকা জরিমানা করেছেন। উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবা খানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের এই অভিযা পরিচালিত হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, কসবা উপজেলার প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আদর্শ সরকারি মহাবিদ্যালয়। উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়ন এলাকার সৈয়দাবাদ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ঠিক সামনের দিকে অনতিদূরেই গড়ে তোলা হয়েছে ‘বিজনা ব্রিকস’ নামীয় ইটভাটা। ফসলি জমির উপর গড়ে তোলা ইটভাটার পাশেই রয়েছে মানুষের বসতবাড়ি, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক। সৈয়দাবাদ গ্রামের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ইউসুফ ভুইয়া ও বিল্লাল মেম্বারের ভাইয়ের যৌথ মালিকানায় এই ইটভাটা গড়ে তোলায় এলাকার সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করারও সাহস পায়না। তদুপরি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিকটবর্তী স্থানে অবস্থানের কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়নি ‘বিজনা ব্রিকস’ নামের এই ইটভাটা। একই ইউনিয়নের তিনলাখপীর বাসস্ট্যাণ্ডের খানিক উত্তরে ফসলি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ‘কসবা ব্রিকস’ নামের অপর একটি ইটভাটা। এটিরও নিকটবর্তী স্থানে রয়েছে জনবসতি, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক এবং পল্লী বিদ্যুতের সাবস্টেশন। এই কসবা ব্রিকস নামের ইটভাটার নেই ইট পোড়ানোর লাইসেন্স। প্রশাসন তাদেরকে লাইসেন্স সংগ্রহ করতে বললেও তারা তা করেনি। উপরন্তু পরিবেশ আইন উপেক্ষা করে এবং স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের বিধি- নিষেধকে অগ্রাহ্য করে ইট পুড়িয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করেই যাচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা মোতাবেক উপজেলা প্রশাসন বুধবার ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করে ‘বিজনা ব্রিকস’ মালিককে চার লাখ এবং ‘কসবা ব্রিকস’ মালিককে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন। ইতিপূর্বে দুটি ইটভাটাকে সতর্ক করা হলেও তারা সতর্ক বার্তাকে উপেক্ষা করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলো।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালকারী কসবা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবা খান বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ‘বিজনা ব্রিকস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে তাই পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স পাচ্ছে না। তাদেরকে সরে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু তা অমান্য করে ইট পোড়ানোয় জরিমানা করা হয়। অপরদিকে কসবা ব্রিকসের ইট পোড়ানোর লাইসেন্স নেই, এটা তারা সংগ্রহ করেন নি। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ ( সংশোধিত ২০১৯) এর লংঘন করায় ওই প্রতিষ্ঠান দু’টিকে জরিমানা করা হয়।’