মুরাদ মৃধা, নাসিরনগর:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে লাইজু আক্তার (১৬) নামে এক কিশোরীকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে ওই কিশোরীর বাবা সানু মিয়া ও কিশোরীর মামা মাজু মিয়া। গতকাল সোমবার বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আহমেদের আমলী আদালতে দুজন এ জবানবন্দি দেন। এর পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান নাসিরনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত মো. কবির হোসেন।
এর আগে ২৩ জুন নিখোঁজ হয় লাইজু। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তার তার কোন সন্ধান পায়নি পরিবারের লোকজন। পরে শনিবার ২৭ জুন সকাল ১১টার দিকে স্থানীয়দের মাধম্যে খবর পেয়ে নাসিরনগর থানার পুলিশ উপজেলার ধরমন্ডল গ্রামের লম্বাহাটির একটি খাল থেকে নিখোঁজের ৫ দিন পর অর্ধগলিত এক কিশোরীর লাশ উদ্ধার করে। ওই কিশোরী নাসিরনগর উপজেলার ধরমন্ডল ইউনিয়নের লম্বাহাটি পাড়ার সানু মিয়ার মেয়ে।
এদিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অতিক্তি পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন, সদর সার্কেল (দায়িত্বে সরাইল সার্কেল) নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। হত্যার ঘটনায় কিশোরীর মা সাহেদা বেগম অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনার সন্দেহে সানু মিয়া ও মাজু মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার আটক করে । পরে সোমবার লাইজু আক্তারের হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি দিয়েছেন লাইজুর বাবা সানু মিয়া (৬৫) ও লাইজুর মামা মজু মিয়া(৩০)।
নাসিরনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত মো. কবির হোসেন সমকালকে বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে লাইজুর বাবা সানু মিয়া ও লাইজুর মামা মাজু মিয়া আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।জিজ্ঞাসাবাদে লাইজুর মামা মাজু মিয়া জানান, লাইজুর স্বভাব চরিত্র ভালো ছিলোনা। বিভিন্ন ছেলেদের সাথে শারীরিক মেলামেশা করত। গত ২২ জুন মাজু মিয়ার বাড়ির পাশে একটি পাটক্ষেতে এক যুবকের সাথে মেলামেশা করতে দেখে।তখন বিষয়টি লাইজুর বাবা সানুকে অবহিত করে মাজু। পরে ২৩ জুন সানু ও মাজু পরিকল্পনা করে লাইজুকে হত্যা করার। ওই দিন দিবাগত রাত ১০টার সময় মাজুর বাড়ির পাশে একটি খালের কাছে নিয়ে গিয়ে লাইজুর গলায় থাকা ওড়না প্যাঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তার বাবা সানু এবং লাইজু যাতে নড়াচড়া করতে না পাড়ে সে জন্য তার পা চাপ দিয়ে ধরে লাইজুর মামা মাজু। এর পর সে মারা যায়। লাইজুর মৃত্যু নিশ্চিত হবার পর তার লাশ পাশের একটি খালের কুচরিপানার নিচে লুকিয়ে রাখে।
এ বিষয়ে অতিক্তি পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন, সদর সার্কেল (দায়িত্বে সরাইল সার্কেল) সমকালকে জানান, ঘটনার দিন শনিবার আমিসহ নাসিরনগর থানার ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এবং লাশের অবস্থার আলোকে প্রাথমিকভাবে আমাদের সন্দেহ হয় এটি হত্যাকান্ড। পরে নিহতের পরিবারের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং তারা হত্যার সাথে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন। হত্যার সাথে অন্য যারা জড়িত আছে তাদেরও খুব অল্প সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা হবে।