আজিজুর রহমান চৌধুরী:
যে বয়সে বই খাতা নিয়ে স্কুলে ছুটাছুটি করার কথা সেই বয়সে ওরা ঘরের মেঝেতে বসে থাকে। সহপাঠীদের ন্যায় তারা দৌড়াতে পারেনা, তাদের পা চলেনা; অবশ অচল।
একই পরিবারের তিন হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত। লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ থাকলেও আজ তারা নিরুপায়। বাড়ির আঙিনায় স্কুল থাকলেও তারা শিক্ষা বঞ্চিত। এদের গ্রামের বাড়ি উপজেলা সদর টেকানগর গ্রামে। তারা হতদরিদ্র দিনমজুর ফুল মিয়ার ছেলে। ওরা তিন ভাইয়ের মধ্যে দুই ভাই টেকানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। বড় ভাই সিরাজুল ৫ম শ্রেণিতে ও মেঝো ভাই ফয়সল ৩য় শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ভাই জাহিদুল সবেমাত্র স্কুলে যাতায়াত করে। গত শনিবার ফুল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের সাথে। সে জানায় প্রথমে সিরাজুলের নাকে একটি ক্ষতস্থান থেকে রক্ত ঝরতো। পরবর্তীতে একটি দাঁত পড়লে প্রায় দুই মাস দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত ঝরে। স্থানীয় ডাক্তার কবিরাজ ঝাড়ফুঁক কোনো কাজের আসেনি। যে যেখানে চিকিৎসার কথা বলেছে অসহায় পিতা ফুল মিয়া রোগীদের নিয়ে সেখানেই হাজির হয়েছে। কিন্তু কোথাও কোনো ফল পায়নি।
অবশেষে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসলে তাদের ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে চিকিৎসার পরামর্শ দেয়া হয়। কিংকর্তব্যবিমূঢ় পিতা সহায় সম্বল বিক্রি করে সুধী মহাজনদের টাকায় চড়া সুদে চিকিৎসার ব্যাবস্থা করেন। প্রথমে সিরাজ ও পরে ফয়সলকে ও বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের ছাড়পত্রে দেখাযায় গত ১১/০৭/২০১৮ ইং ভর্তি হয়ে ১৯/০৭/২০১৮ পর্যন্ত চিকিৎসা নেন৷ ডাঃ ফাতেমা ফারজানার চিকিৎসা সহায়তায় একটু সুস্থ হলে পরবর্তী ঔষধপত্র নিয়ে বাড়িতে আসেন।
এখন পুনরায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে তাদের চিকিৎসা প্রয়োজন। তারা দিন দিন পঙ্গুত্বের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তিন সন্তানের ব্যয়বহুল চিকিৎসা দিনমজুর ফুল মিয়ার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সে বাচ্চাদের চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবান শিক্ষানুরাগীদের কাছে হাত বাড়ান।
এ ব্যাপারে টেকানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রীনা আক্তারের সাথে যোগাযোগ করলে জানা যায়, বড়ছেলে সিরাজুল ৫ম শ্রেণি থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে এবং ফয়সল ৪র্থ শ্রেণিতে পড়লেও রোগের জন্য স্কুলে আসতে পারেনা, সেও বিত্তবানদের নিকট বাচ্চাগুলোর চিকিৎসা সহায়তা চায়।