শফিউল সজীব
শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অাখাউড়া উপজেলা। অথচ বিদ্যুতের চুর-পুলিশ খেলায় চরম বিপাকে পড়েছে উপজেলার মানুষ। কখনো দিনে ১৫-২০ বার, কখনো ১০ মিনিটে তিনবার লোডশেডিং হচ্ছে। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, কোনো ঋতুতেই বন্ধ হচ্ছে না লোডশেডিং।
আখাউড়া পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসে নতুন ডিজিএম যোগদানের পর থেকে গত এক বছরে এমন দুর্ভোগ চরম আকার ধারন করেছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
ভুক্তভোগীরা জানান, ঘন ঘন বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার কারণে ফ্রিজ, টিভি, ফ্যানসহ বৈদ্যুতিক পণ্যসামগ্রী নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া শিশু-বয়োবৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। যাদের আইপিএস আছে তারাও পাচ্ছেন না আইপিএস চার্জ দেয়ার সুযোগ। বিষয়টি বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও মেলেনি সুরাহা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে আখাউড়া পৌর এলাকাসহ ৫ টি ইউনিয়নে চলছে নিয়মিত লোডশেডিং। পৌর শহরে কিছুটা কম হলেও ইউপি পর্যায়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে লোডশেডিং। কখনো কখনো একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে ৭-৮ ঘণ্টার আগে আসে না।
অব্যাহতভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে সাধারন মানুষ। রাতের বেলায় বিদুৎ না পেয়ে বেশিরভাগ যুবক ছেলেরাই রাস্তায় এসে বসে থাকে। যা সভ্য সমাজ ব্যাবস্থার জন্য হুমকিস্বরুপ।
উপজেলার বিভিন্ন অফিস গুলোতে গেলে কর্মকর্তা কর্মচারীরা ব্যাক্ত করেন মিশ্র প্রতিক্রিয়া, অফিস গুলোতে নেমে এসেছে স্থবিরতা। কম্পিউটারে একটি ফাইল তৈরি করতে যেখানে ৩০-৩৫ মিনিট সময় লাগে সেখানে ২-৩ ঘন্টায়ও করতে পারছেনা। কারন কম্পিউটার চালু করে নেট পেতে সময় লাগে ১০-১৫ মিনিট এসময়ের মাঝে আবারও বিদ্যুৎ চলে যায়।
ফলে ব্যাহত হচ্ছে অনেক জরুরি গুরুত্বপূর্ণ দাপ্তরিক কাজ।
পৌর এলাকার বাসীন্দা মাহীন বলেন, আমাদের বিদুৎ যায়না, মাঝে মাঝে আসে। কারন আমাদের আছে ৩৩ কেবি লাইনের গল্প।
মনিয়ন্দ ইউপির হৃদয় খন্দকার বলেন আখাউড়া পল্লিবিদ্যুতের জোনাল অফিসে বর্তমান ডিজিএম যোগদানের পর থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে আমরা চরম বিপাকে আছি। তারা শুধু ৩৩ কেবি লাইনের দোহায় দিয়ে দিনের পর দিন আমাদেরকে বিদ্যুৎ বিহিন রেখে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। ওনার নামে রয়েছে শতশত অভিযোগ।
ধরখার ইউনিয়নের বাসিন্দা সীমান্ত বলেন, আসলে আমাদের বিদুৎ কখন আসে আর কখন যায় সেটা বলা মুশকিল। হেল্প লাইনে ফোন দিলে ওনারা ফোন ধরেনা। ডিজিএম সাহেবকে দুই বার ফোন দিয়েছিলাম, ওনার ব্যাবহার খুবই খারাপ।
আখাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ নাঈম বলেন, সেদিন আমি ডিজিএম সাহেবকে লোডশেডিংয়ের কারন জিজ্ঞাসা করলে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেন, একপর্যায়ে আমি বলি, বিদ্যুতের এত অনিয়ম হলে আমরা মাননীয় আইনমন্ত্রী মহোদয়কে জানাতে বাধ্য হবো, তখন তিনি তিরস্কার করে আমাকে বলেন, আমি কি আপনার মন্ত্রীর চাকরি করি?
আখাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাবউদ্দীন বেগ শাপলু বলেন, পল্লী বিদুৎ অফিসে অভিযোগ করতে করতে আমরা একপ্রকার বিরক্ত। প্রতিদিনই অভিযোগ করি আর ডিজিএম সাহেব আমাদের গ্রীডে সমস্যার কথা বলেন, গ্রীডে প্রতিদিন এমন কি সমস্যা হয় সেটিই বুঝতে পারিনা।
আখাউড়া পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম মো. আবুল বাশার গ্রেটার কুমিল্লার প্রতিবেদকে বলেন , আখাউড়ায় কোন লোডশেডিং নেই, আপনাদেরকে আগে বুঝতে হবে লোডশেডিং কি? আমাদের অনেক বড় লাইন তাই কোথাও না কোথাও সমস্যা হয়, আবার ঝড় বৃষ্টির কারনেও লাইন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এমনিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বভাবিক আছে।