এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. মস্তু মিয়া। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধকালে ছিলেন থানা কমাণ্ডার। সম্প্রতি মারা গেছেন। দুই মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে থাকেন বিধবা স্ত্রী। আর এই সুবাধে ভিটেবাড়ি দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন তারই ভাতিজা! বাঁধা দেয়া-বাড়ির দখল না ছাড়ায় এবং বিষয়টি পুলিশকে জানানোয় ওই মুক্তিযোদ্ধার অসহায় পরিবারের নারীদের ওপর এখন শুরু হয়েছে নানাভাবে মানুষিক নির্যাতন, দেয়া হচ্ছে প্রাণনাশের হুমকি। ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল রাণীদিয়া গ্রামের।
উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের রাণীদিয়া গ্রামের সদ্যপ্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মস্তু মিয়ার মেয়ে ও স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী রহিমা খাতুন লুবনা বলেন, আমার বাবা মস্তু মিয়া স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে থানা কমাণ্ডা ছিলেন। কয়েকদিন আগে আমার বাবা মারা গেছেন। আমার দুই ভাই চাকুরির সুবাদে বাইরে থাকে। বাড়িতে আমার বিধবা মা, আমি ও আমার বোন অবস্থান করছি। আবদুল্লাহ আল মাহমুদ মানিক নামে আমারই চাচাতো ভাই পারিবারিক বিরোধে আমাদেরকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে টাকার বিনিময়ে এলাকার কতেক উশৃংঙ্খল লোককে আমাদের পেছনে লেলিয়ে দিয়েছে এবং তারা আমাদের পৈতৃক ভিটা-জায়গা জবরদখলের অপচেষ্টা করছে। পুরুষশূণ্য আমাদের বাড়িতে এসে তারা একাধিকবার প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে গেছেন। রাণীদিয়া গ্রামের আঙ্গুর, জমশেদ, রাশিদ, মুখলেছ, মোবারক, হোসাইনসহ কয়েকজন গ্রাম্য সন্ত্রাসীকে মানিক টাকার বিনিময়ে ভাড়া করেছে। এরা মানিকের ইন্ধনে আমাদের ওপর নানা অত্যাচার শুরু করেছে। তারা আমাদের ঘরের দরজা-জানালায় রাতে ঢিল ছুঁড়ে ও লাথি মেরে আমাদের ভয় দেখায়। দিনের বেলায় প্রকাশ্যে বাড়িতে এসে গাছের ডালপালা কেটে নেয়, বিভিন্ন গাছের ফল জোরপূর্বক নিয়ে যায়। এই বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর আমদের অনুরোধে পুলিশ এলাকায় আসলে সন্ত্রাসীরা গা-ঢাকা দেয়।
রহিমা খাতুন লুবনা অভিযোগ করে বলেন, ‘চাচাতো ভাই আবদুল্লাহ আল মাহমুদ মানিক ফেনী জেলার কর কমিশনার কার্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী। মাত্র ১০ বছরের চাকরি জীবনে মানিক এখন কয়েক কোটি টাকার মালিক। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে কিনেছেন বাড়ি। অরুয়াইল বাজার এলাকায় জায়গা কিনে কোটি টাকা খরচ করে পাঁচতলা ফাউন্ডেশনে বাড়ি নির্মাণ করছেন। প্রতিমাসে তার দুই লাখ টাকার বেশি আয়, এমন অহঙ্ককার প্রায়ই আমাদের সঙ্গে দেখান। টাকার জোরেই চাচাতো ভাই মানিক গ্রামের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে আমাদের ওপর পূর্বেকার পারিবারিক বিরোধ মেটাচ্ছেন।’ অভিযোগের ব্যাপারে জানতে অরুয়াইল এলাকায় মানিকের বাড়িতে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার পরিবারের লোকজন কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। সরাইল থানাধীন অরুয়াইল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) বাপন চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার মেয়ের লিখিত অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে বিজ্ঞ আদালতে লিখিত অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলে ওই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সরাইল থানার পরিদর্শক (ওসি) আল মামুন মুহাম্মদ নাজমুল আহমেদ বলেন, ‘প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার ওই পরিবারের লিখিত অভিযোগ আমরা পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে। এলাকাটি দুর্গম প্রান্তে হওয়ায় তারা যখন তখন ওই পরিবারের উপর নানা হয়রানি করছে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গেলেই তারা গা-ঢাকা দেয়। তবে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মস্তু মিয়ার পরিবারের কোনো ক্ষতি পুলিশ হতে দিবে না। ওই অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে সকল ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।