এমদাদুল হক সোহাগ
কুমিল্লা নগরীর অতিপরিচিত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাক্তার তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ ২৭ বছর ধরে সুনামের সাথে কুমিল্লায় হৃদরোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘ ২৭ বছরে অগনিত রোগীর হৃদয়ের সাথে তার অন্যরকম মিতালি তৈরি হয়েছে।
মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবেও কুমিল্লা নগরীর সিডিপ্যাথ হসপিটালে নিজস্ব চেম্বারে রোগীদের সতর্কতার সাথে চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রেখেছেন। বিচ্ছিন্ন হননি রোগীদের হৃদয়বন্ধন থেকে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চেম্বারে আসা রোগীদের শরীরের তাপমাত্রা যাচাই করা হচ্ছে। তাপমাত্রা বেশী থাকলে রোগীর চেস্ট এক্সরে করে করোনার সাসপেক্টেড মনে হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে থাকেন। তাছাড়া অন্যসব হৃদরোগীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বৈরী পরিস্থিতি অনেক চিকিৎসকই তাদের চেম্বার বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছেন সেখানে নিয়মিত হৃদরোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
অধ্যাপক ডাক্তার তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ টাংগাইল জেলার নাগরপুরে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্নাতক এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি সরকারি স্কলারশীপে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের তাসখন্দ থেকে ১৯৯২ সালে কার্ডিওলোজিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ২০০৫ সালে আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলোজি এবং ২০০৭ সালে রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অব এডিনবার্গ থেকে ফেলোশিপ ডিগ্রি অর্জন করেন।
এ ছাড়াও হৃদরোগ চিকিৎসা ও গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কার্ডিওলোজি ২০০৬ সালে তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করেন।
ডা. তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ একজন কার্ডিওলোজির অধ্যাপক এবং কুমিল্লার ময়নামতি মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ। বর্তমানে তিনি কুমিল্লা সিডি প্যাথ এন্ড হসপিটালে হৃদরোগে বিশেষজ্ঞ হিসেবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। তার বহু বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রবন্ধ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এ পর্যন্ত তার লেখা দুটি কাব্যগ্রন্থসহ আটটি বই প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি হৃদরোগ প্রতিরোধ, চিকিৎসা, পুণর্বাসন ও গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান হার্ট কেয়ার ফাউন্ডেশন, কুমিল্লা, বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। যার মাধ্যমে তিনি হৃদরোগ বিষয়ে জনসচেতনতার পাশাপাশি কয়েক হাজার দুস্থ: জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। তিনি পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ আন্তর্জাতিক সেবামূলক সংগঠন রোটারী ইন্টারন্যাশনাল এর হয়ে দীর্ঘদিন যাবত সেবামূলক কাজের সাথে জড়িত। তিনি ২০০৭-০৮ রোটাবর্ষে রোটারী ক্লাব অব কুমিল্লার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি মাল্টিপলপল হ্যারিস ফেলো এবং বেনিফ্যাক্টর।
অধ্যাপক ডাক্তার তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, করোনা মহামারীতে সাধারণ রোগীদের হাসপাতালে আসার দরকার নেই। জরুরী হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাসপাতালে আসতে হবে। অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানেননা যার কারনে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে। একজনের মাধ্যমে অন্যজন আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর আমি রোগী দেখা অব্যাহত রেখেছি। তাছাড়া, হাসপাতালের ভর্তি রোগীদেরও প্রতিনিয়ত চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। করোনার ভয়ে যদি রোগীদের চিকিৎসাসেবা না দেই তাহলে তারা যাবে কোথায়? মানবিক বিষয় ও নৈতিকতার বিষয় চিন্তা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছি।