কুমিল্লায় সেবার ব্রত নিয়ে ব্যবসায়ী নেতার অক্সিজেন পয়েন্টের যাত্রা

এমদাদুল হক সোহাগ:
মহামারি করোনার থাবায় আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীকে দিতে হয় অক্সিজেন সাপোর্ট। কিছু কিছু রোগীকে সেই অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে না পারলেই জীবন রক্ষা করা যায়না। কুমিল্লাতে গত বছর থেকেই অক্সিজেন সিলিন্ডারের সঙ্কট দেখা যায়। এ বছরের জুলাই ও আগষ্টের শুরুতে অক্সিজেন সঙ্কট চরম আকার ধারন করে। মানুষ অক্সিজেনের জন্য অসহায় ও নিরুপায় হয়ে ঘুরেছেন এক দোকান থেকে অন্য দোকানে। সাহায্য নিয়েছেন মানবিক সংগঠনের। একটি নিম্ন মানের সিলিন্ডারও কিনতে হয়েছে ২৫ থেকে ৩২ হাজার টাকায়, উচ্চ মূল্য দিয়েও অনেকে সিলিন্ডার পায়নি। কুমিল্লার মানুষের এমন দুরাবস্থা দেখে অক্সিজেন ব্যবসায় এগিয়ে এসছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ও কুমিল্লা স্টেশন রোড দক্ষিণের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রোটারিয়ান মো: জহিরুল ইসলাম জহির।

স্টেশন রোডে প্রতিষ্ঠা করেছেন অক্সিজেন পয়েন্ট নামের অক্সিজেনের দোকান। উদ্দেশ্য ন্যায্যমূল্যে মানুষ যাতে মানসম্মত অক্সিজেন ও সিলিন্ডার পায়। তিনি ইসলাম অক্সিজেনের অনুমোদিত ডিলার। ইতিমধ্যে তার দোকান থেকে সুফল পেতে শুরু করেছেন কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কয়েকটি উপজেলার মানুষ। স্বল্পমূল্যে মেডিকেল অক্সিজেন সিলিন্ডার ও গ্যাস পাচ্ছেন। খালি অক্সিজেন সিলিন্ডারও অল্প সময়ের মধ্যে রিফিল করতে পারছেন অল্প টাকায়। এই দোকানটির যাত্রার মধ্য দিয়ে কুমিল্লায় অক্সিজেন ব্যসায়ীদের দৌরাত্ম হ্রাস পাবে বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকেরা।

জানতে চাইলে, প্রতিষ্ঠানের মালিক রোটারিয়ান মো: জহিরুল ইসলাম জহির বলেন, করোনায় আমার পরিচিত পরিজন প্রায়ই আমাকে ফোন করে সহযোগিতা চাইতো। সিলিন্ডারের জন্য আকুতি জানাতো। যেহেতু কুমিল্লা স্টেশন রোডে কয়েকটি অক্সিজেনের দোকান রয়েছে সেহেতু ব্যসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমার কাছে অনেক অভিযোগ আসতে শুরু করে। আমি সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে কূলিয়ে উঠতে পারতেছিলাম না। বিশেষ করে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র জমির উদ্দিন খান জম্পী, মহানগর আওয়ামলীগ বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক কাউন্সিলর সরকার মাহমুদ জাবেদ, দোকান মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ সহ অনেকেই প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেন যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেন। কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন বিষয়টি কঠোরভাবে দেখার জন্য এগিয়ে আসলেন। আমার সাথে তিনি সরেজমিনে এসে অক্সিজেন ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আমাকে এই ব্যবসায় এগিয়ে এসে সঙ্কটকালীন সময়ে মানুষের পাশে দাড়ানোর আহবান জানান। তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণায় আমি অক্সিজেন পয়েন্ট ব্যবসা শুরু করতে এগিয়ে এসছে। এখন আমার এই দোকান থেকে মানুষ ন্যায্যমূল্যে উন্নতমানের অক্সিজেন সিলিন্ডার ও গ্যাস রিফিল করতে পারছেন। আমি মানুষকে সেবা দিতেই মূলত এত টাকা বিনিয়োগ করেছি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার এ্যাম্বুল্যান্স চালক যুবায়ের আহম্মদ বলেন, দোকানটি হওয়ার পর আমরা এখান থেকেই স্বল্পমূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও রিফিল করতে পারছি।

সামাজিক ও মানবিক সংগঠনের এক সদস্য জানান, আগে সিলিন্ডার রিফিল করতে তিন চারদিন লাগতো, টাকা দিতে হতো অনেক বেশী। অক্সিজেন পয়েন্টের মাধ্যমে আমরা সন্ধ্যায় খালি সিলিন্ডার রিফিল করতে দিলে পরদিনই পেয়ে যাচ্ছি। টাকা লাগছে মাত্র দুইশ টাকা।

কুমিল্লা দোকান সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন বলেন, আমার কাছে অক্সিজেনের বিষয়ে প্রচুর অভিযোগ আসে। মানুষের সাথে কিছু ব্যবসায়ী ঝুলুম শুরু করেছিল। আমি চেষ্টা করেছিলাম তাদেরকে সঠিক জায়গায় আনতে কিন্তু কিছুতেই তাদের লাগাম টানতে পারেনি। পরবর্তীতে সঙ্কট সমাধানে ঢাকায় যোগাযোগ করে বিষয়গুলো বুঝতে পেরে কুমিল্লার মানুষের কথা চিন্তু করে আমি জহিরকে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করি। বর্তমানে মানুষ অক্সিজেন পয়েন্ট থেকে উন্নতমানের সিলিন্ডার ও গ্যাস পাচ্ছে। আমার মনে হয় অসহায় পরিবারগুলোর ভরসার জায়গা হয়েছে। কুমিল্লায় আর কোন অবৈধ অক্সিজেন সিন্ডিকেট টিকতে পারবেনা।

 

Post Under