এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডবের ঘটনায় এখন বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১০ প্লাটুন বিজিবি সদস্যরা গান কার নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ ও এবিপিএন সদস্যদের। হামলার ঘটনায় ১৪ জনকে আটক করা হলেও হয়নি কোনো মামলা। তবে এক যুবক নিহতের বিষয়ে হয়েছে অপমৃত্যুর মামলা।
প্রকাশ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকায় সফরকে ঘিরে সৃষ্ট আন্দোলনের জেরে ২৬ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় তাণ্ডব চালায় আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে টায়ারে আগুন লাগিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে বিক্ষুব্ধরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রেল স্টেশনে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। রেল স্টেশনের সিগন্যাল, মাস্টার রুম, কন্ট্রোল রুম অন্যান্যদের কর্মকর্তাদের কক্ষ ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে সমস্ত মালামাল জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেয়, তুলে ফেলা রেল লাইনের স্লিপারও। সিগন্যাল বক্স ভেঙ্গে ধরিয়ে দেয়া হয় আগুন। এর ফলে ঢাকার সাথে সিলেট ও চট্টগ্রামের সকল প্রকার ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। ঢাকাগামী কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে প্রবেশকালে বিক্ষুব্ধদের পাথর নিক্ষেপ করতে থাকলে ট্রেনটি আখাউড়া জংশনে ফিরে যায়।
আরো পড়ুনঃ
শুক্রবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে জেলা পরিষদ কার্যালয়ে ব্যাপক হামলা চালানো হয়। শহরের কাউতলী, ভাদুঘরে চালানো হয় ব্যাপক ভাঙচুর। সড়কে আগুন ধরিয়ে রাস্তায় অবরোধ করা হয়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের খাঁটিহাতা বিশ্বরোড মোড়, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের শহরতলীর নন্দনপুর, সুহিলপুর, মজলিশপুর, ঘাটুরাসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কে সৃষ্টি করে প্রতিবন্ধকতা। বন্ধ হয়ে যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাথে দেশের বিভিন্ন স্থানে দূরপাল্লার সড়ক যোগাযোগ। শহরের জেলা পরিষদ, পৌর মুক্তমঞ্চ, পৌর মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুারাল ভেঙ্গে ফেলে। প্রধান সড়কে বন্ধ করে দেয় যানবাহন চলাচল। মুহূর্তেই সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে গোটা শহর পরিণত হয় অনেকটাই ভূতুরে নগরে। বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে টায়ার জ্বালিয়ে করতে থাকে বিক্ষোভ। স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে আলোকসজ্জা, সড়ক সজ্জিতকরণ ব্যানার-ফেস্টুন ভেঙ্গে ধরিয়ে দেয় আগুন। শহরের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরা করা হয় ভাঙচুর। উগ্র বিক্ষুব্ধরা নরেন্দ্র মোদী বিরোধী শ্লোগান দিতে থাকে।একটা সময়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা জজ এর বাসভবনের মূল ফটকে চালায় হামলা।পরবর্তীতে প্রায় পাঁচ শতাধিক বিক্ষুব্ধ লোক পুলিশ সুপার কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে গ্যারেজে থাকা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, ভাঙচুর করে ভবনের নিচতলার জানালা।একই সময়েই জেলা মৎস্য অফিস, সিভিল সার্জন অফিস, ২নং পুলিশ ফাঁড়ি, জেলা পরিষদের ডাকবাংলাতে করে অগ্নিসংযোগ। পুড়িয়ে দেয় বেশ কয়েকটি গাড়ি। বিকেলের দিকে শহরের কাউতলী এলাকার দাতিয়ারা গ্রামের সাগর মিয়ার পুত্র আশিক (২৫) গুরুতর আহত হলে জেলা সদর হাসপাতালে নেবার পর চিকিৎসারত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরে বিক্ষুব্ধরা লাশ নিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে লাশ মাদ্রাসায় নিয়ে যায়। রাতেই শহরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। শনিবার দুপুরে ময়না তদন্তের পর আশিকের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ বিষয়ে হয়েছে একটি অপমৃত্যুর মামলা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) আবদুর রহিম জানান, ‘হামলার ঘটনায় ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে আশিক নামের যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হয়েছে একটি অপমৃত্যুর মামলা।’ জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান জানান, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১০ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’
এদিকে রোববার হেফাজতে ইসলাম আহুত হরতালের সমর্থনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মিছিল হয়েছে। শনিবার দুপুরে হেফাজতে ইসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্যোগে জামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসা চত্বর থেকে একটি মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক টি.এ রোড প্রদক্ষিণ করে। পরে ফকিরাপুলে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশ বক্তব্য রাখেন মাওলানা সাজিদুর রহমান, মাওলানা মুফতি মোবারক উল্লাহসহ অন্যান্যরা। এ সময় বক্তারা, মোদীর বাংলাদেশ সফরের নিন্দা জানান এবং এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চট্রগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদ্রাসা ছাত্রদের উপর হামলা ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবী করেন। সেই সাথে আগামীকাল রোববার হেফাজতে ইসলামের ডাকা দেশব্যাপী হরতাল সফল করার লক্ষ্যে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।