এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ত্রয়োদশী কিশোরী সায়মা আক্তার।অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। পড়াশোনায় ভালো হলেও দরিদ্র পিতা ব্যয় বহনে অসমর্থতাসহ নানান কারণে কিশোরী কন্যাকে পাত্রস্থ করে হতে চেয়েছিলেন অনেকটা ভারমুক্ত।অবশেষ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা প্রশাসনের তরিৎ-বাস্তবসম্মত হস্তক্ষেপ গ্রহণের ফলে বাল্যবিয়ে বন্ধের পাশাপাশি স্থাপিত হলো অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে বাল্যবিয়ের অভিশাপ থেকে রেহাই পাওয়া ১৩ বছরের কিশোরী সায়মা আক্তার সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের বেহাইর গ্রামের জুরু মিয়ার মেয়ে। সে স্থানীয় বটতলী বাজারস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।
আরো পড়ুনঃ
জানা যায়, ৬ নভেম্বর শুক্রবার একই গ্রামের মো. আউয়াল মিয়ার ছেলে তোফাজ্জলের (২৫) সাথে সায়মার বিয়ের দিন ধার্য্য ছিলো। ইতিমধ্যে বিয়ের সকল পূর্ব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে উভয় পক্ষ। তবে বাল্যবিয়ের অভিযোগ পেয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পঙ্কজ বড়ুয়া একদিন আগেই বৃহস্পতিবার সকালে নিজ কার্যালয়ে তলব করেন ওই বিয়ের পাত্র ও পাত্রী পক্ষকে। যথাসময়ে যথাস্থানে উপস্থিত বর-কনেসহ উভয় পক্ষের অবিভাবককে বাল্য বিবাহের কুফল ও শাস্তির বিষয়ে অবহিত করেন এবং দু’পক্ষকেই বাল্যবিয়ে বন্ধ করার নির্দেশ প্রদান করেন। বিষয়টি সম্পর্কে সম্যক অবহিত হয়ে উভয় পক্ষই বিয়ে বন্ধ করবেন মর্মে মুচলেকা প্রদান করেন। এছাড়াও কিশোরীর বাবা দরিদ্র হওয়ায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জীবন ভট্টাচার্য্যকে কিশোরী সায়মা আক্তারের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করেন। এসময় কিশোরীকে শিক্ষাসহায়ক সরঞ্জাম কেনার জন্য নগদ দুই হাজার টাকাও প্রদান করেন। শেষ মুহূর্তে বাল্য বিয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ায় এবং নতুন করে পড়াশোনা চালিয়ে যাবার সুযোগ পাওয়ায় কিশোরী সায়মা আক্তার আবেগে আপ্লুত হয়ে ইউএনওকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পঙ্কজ বড়ুয়া বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন কঠোর নজরদারি রাখছে। বেহাইর গ্রামের বাল্যবিয়ের খবরে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ওই কিশোরীকে রক্ষা করা হয়। পাশাপাশি তার পাড়াশোনায় সরকারি সুযোগ সুবিধার দায়িত্বও নেয়া হয়েছে।গত মাসে ১২টি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধসহ একাধিকজনকে জেল জরিমানাও প্রদান করা হয়। বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পাশাপাশি সামাজিকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।